Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বিরোধ-সংঘাতের তর্কযুদ্ধ বিশ্বনেতাদের

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:০৯ AM
আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:০৯ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে আটঘাট বেঁধে তর্কযুদ্ধে নেমেছেন বিশ্বনেতারা। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার থেকে সাধারণ বিতর্ক শুরু হয়েছে। চলবে ১ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের সঙ্গে বিরোধ-সংঘাতের ঠিকুরজি তুলে ধরতে প্রস্তুত নেতারা।

পাশাপাশি বিশ্বের সংঘাতকবলিত এলাকাগুলো নিয়েও চলবে কথার লড়াই। কার্যত বাস্তবায়নের কোনো মুখ না দেখলেও স্বল্প আয়ুষ্কালের এসব বক্তব্যের দিকে নজর থাকে সারা বিশ্বের।

বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভাষণ নিয়ে চলে নানা আলোচনা-সমালোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ। গত বছর জাতিসংঘের অভিষেক ভাষণে অকূটনৈতিক ভাষায় হুংকার দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে ‘রকেটম্যান’ বলে উপহাস করেছিলেন। এ অধিবেশনেও তাকে নিয়ে ভয়। এবার কিমকে ছেড়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানিকে ধরবেন বলে মনে করছে বিশ্লেষক মহল।

এএফপি বলছে, এবার ট্রাম্পের নজর থাকবে ইরানের ওপর। তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়া নিয়ে ট্রাম্প-রুহানি বাকযুদ্ধ হয়েছে। একে অপরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেয়ার উত্তম মঞ্চ হবে জাতিসংঘ। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মুখোমুখি হবেন না বলেই উভয়ই জানিয়ে দিয়েছেন।

মঙ্গলবার এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন, ‘নিউইয়র্কে এবার তার সঙ্গে বৈঠকের কোনো ইচ্ছা নেই। সম্ভব হলে আগামীতে দেখা হবে। আমি নিশ্চিত তিনি একজন ভালো মানুষ।’

রুহানি একটু হুংকারের সুরে বলেন, ‘পরমাণু চুক্তি নিয়ে ক্ষতিপূরণ না করার আগে কোনো সংলাপ নয়।’ প্রথম দিনের বিতর্কে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ফ্রান্স, ব্রাজিলসহ ৩৬ দেশের নেতার ভাষণ দেয়ার কথা রয়েছে।

আজ বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন ট্রাম্প। বৈঠকের মূল আলোচ্যসূচি হবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর দায়িত্ব। এ বৈঠকে ট্রাম্প একঘরে হয়ে যাবেন বলে জানিয়েছে সিএনএন। কারণ রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও চীন ইরান পরমাণু চুক্তি এখনও অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে।

এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার নিকট মিত্রদের মতানৈক্য খোলামেলাভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়তে পারে, যা ট্রাম্পের জন্য হবে বিব্রতকর। এছাড়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মোকাবেলায় সোমবার ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি অব্যাহত রাখার প্রতিশ্র“তি দিয়েছে পরমাণু চুক্তির অংশীদার রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও চীন।

আগামী এক সপ্তাহ বিশ্বের নজর থাকবে জাতিসংঘে। সাধারণ পরিষদের বিতর্কে কোনো পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি থাকে না। বিশ্বনেতারা তাদের কাছে আন্তর্জাতিক বা জাতীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ- এমন বিষয়ে বক্তব্য দেন। দেশের স্বার্থে আঘাত হানছে এমন প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে তেতে ওঠেন।

এছাড়া প্রতি বছরের মতো বিশ্ব আলোচিত বিষয়গুলোতেও কথা বলেন নেতারা। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ, ইয়েমেন সংঘাত, উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কার্যক্রম, ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসন, আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু সংকট ইত্যাদি নিয়মিত বিষয় তো থাকবেই। গত বছরের মতো রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও এবার আলোচনা হবে। শুধু বাংলাদেশ নয়, আরও অনেক দেশও মিয়ানমারের রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রোহিঙ্গা গণহত্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবেন।

জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে উত্তপ্ত সম্পর্কের মধ্যে আগামী শনিবার জাতিসংঘ অধিবেশনে বক্তৃতা দেবেন ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সেখানে ইসলামাবাদ যে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তুলে ভারতকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়াদিল্লি। আর সেই কারণেই আগাম আক্রমণে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে মোদি সরকার। সম্প্রতি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের শান্তি আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণের পর প্রত্যাখ্যান করে ভারত। এ নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।

অন্যদিকে দুর্বৃত্তদের হাতে পুলিশ কর্মী হত্যা ও লাগাতার হুমকির পর কাশ্মীরনীতি নিয়েও প্রশ্নের মুখে মোদি সরকার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জাতিসংঘ মঞ্চে ভারত এমন বার্তা দিতে চাইছে, যাতে ঘরোয়া রাজনীতিতেও কিছুটা ক্ষত মেরামত করা যায়। সার্ক দেশভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি মধ্যাহ্নভোজের কথাও রয়েছে নিউইয়র্কে।

এদিকে, কোরিয়া উপদ্বীপে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। জাতিসংঘ অধিবেশনের ভাষণেও কোরীয় শান্তি তুলে ধরবেন তিনি। তার আগে সোমবার ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক সেরে নিয়েছেন মুন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গাড়ি, ঔষধ ও কৃষিপণ্য আমদানি সংক্রান্ত একটি বড় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন দুই নেতা।

বৈঠকে ট্রাম্প জানান, কিমের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকের বিষয়ে ‘অনেক অগ্রগতি হয়েছে’। তার সঙ্গে সম্পর্ক এখন খুবই ভালো, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অসাধারণ।

জাতিসংঘ সদর দফতরে ট্রাম্প সাংবাদিকদের জানান, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ‘শিগগিরই’ পরবর্তী সম্মেলনের দিনক্ষণ ঠিক করবেন। তবে কোথায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে সে বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এছাড়া সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাঁক্রো ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন ট্রাম্প।

Bootstrap Image Preview