জালিয়াতির মাধ্যমে ৬৫ জন ব্যক্তির নামে পাসপোর্ট ইস্যুর ঘটনায় আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদফতরের সাবেক দুই পরিচালকসহ (বরখাস্ত) ৭১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় এই অনুমোদন দেয়া হয়। ৭১ আসামির মধ্যে বরখাস্ত হওয়া সাবেক দুই পরিচালকসহ পাসপোর্ট অধিদফতরের ৮ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।
এরা হলেন- সাবেক পরিচালক (বরখাস্ত) মুনসী মুয়ীদ ইকরাম, পরিচালক (প্রশাসন) এস এম নজরুল ইসলাম, সাবেক সহকারী পরিচালক (বরখাস্ত) এসএম. শাহ্জামান, সাবেক সহকারী পরিচালক (বরখাস্ত) উম্মে কুলসুম, সাবেক সহকারী পরিচালক (বরখাস্ত) নাসরিন পারভীন নুপুর, সাবেক উচ্চমান সহকারী (বরখাস্ত) মো. শাহজাহান মিয়া মো. সাইফুল ইসলাম ও আমেরিকার নিউইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ের উচ্চমান সহকারী মো. আনোয়ারুল হক।
এছাড়া চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে যে ৬৫ জনের নামে সরকারি কর্মকর্তা সাজিয়ে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় তাদেরও চার্জশিটে আসামি করা হয়।
পাসপোর্ট অপব্যবহারকারী ৬৩ জন হলেন- ফেনীর মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন শরীফ, মানিকগঞ্জের মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও মোহাম্মদ রেজাউল করিম, নওগাঁর সাইদুর রহমান ও মো. জালাল মোল্লা, ঢাকার সোহেল রানা, তুষার খান, মোহাম্মদ শাহ জালাল ও মো. বিল্লাল মিয়া; ফরিদপুরের শহিদ শেখ ও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান; সিলেটের আমিন উদ্দিন, দেলোয়ার হোসেন, এম এন সাওন সাদেক, মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, শাহজাহান আহমেদ, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ ফয়েজ আহম্মেদ, আফজল চৌধূরী, কোয়েস আহমেদ, জুয়েল আহমেদ, মামুন রশিদ, মোহাম্মদ মান্নান, মোহাম্মদ শফিকুল আলম মান্না ও মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন; মুন্সীগঞ্জের মোহাম্মদ আরিফ হাসান, মো. ফরহাদ খান, মোহাম্মদ দিপু, মিলন বেপারী ও মো. রাকিব মিয়া, কুমিল্লার কাজী মো. আল আমিন, এস এম হিমেল, সেন্টু চন্দ্র বিশ্বাস, মো. জসিম উদ্দিন, জামাল উদ্দিন, মোহাম্মদ বাবর উদ্দিন, মো. জাহাঙ্গীর আলম ভূঁইয়া, মাহফুজুর রহমান সবুজ, মো. মিজানুর রহমান, শহিদুল ইসলাম মজুমদার ও মোহাম্মদ ইসমাইল সরকার, সুনামগঞ্জের হাবিবুর রহমান, ইমরান হোসেন ও সামছুদ্দিন, নোয়াখালীর মো. হানিফ শিবলু, সহিদ কামাল ও ইয়াসিন আরাফাত, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মোহাম্মদ আরিফ খলিফা, ফারুখ আহমেদ, শিবলী আহম্মেদ, আলাউদ্দিন মিয়া ও রানা আব্দুল মান্নান, টাঙ্গাইলের আব্দুল বারেক ও মনির খান, পাবনার মোহাম্মদ শামীম হোসেন, হবিগঞ্জের মোহাম্মদ মামুন, বরিশালের মো. আমির হোসেন শরিফ, চট্টগ্রামের মোহাম্মদ কামরুল হাসান, লক্ষীপুরের রাশেদ খান, যশোরের মোহম্মদ জামাল উদ্দিন, মাগুরার ইসমাইল হোসেন এবং নারায়ণগঞ্জের মো. ইব্রাহিম খলিল।
উল্লেখ্য,আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর শেরেবাংলানগর থানায় মামলা করেছিল দুদক। মামলাটির তদন্ত করেন দুদকের উপপরিচালক মো. বেনজির আহমেদ। তিনি তদন্ত শেষে ৭১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিলের সুপারিশ করলে তা অনুমোদন হয়।
চার্জশিটে বলা হয়, পাসপোর্ট অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা (আসামি) পরপর যোগসাজশে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে ৬৫ জন ব্যক্তিকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দেখিয়ে তাদের নামে পাসপোর্ট ইস্যু করেন। ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের মে মাসের মধ্যে।
পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে ওই কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার নাম ও পদবি ব্যবহার করেন এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর জাল করেন। জাল অনাপত্তিপত্র (এনওসি) তৈরি করে তা আগারগাঁওয়ের বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস থেকে বিভিন্ন সরকারি দফতরের ভুয়া ও জাল অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ব্যবহার করে ৬৫টি সাধারণ পাসপোর্টকে অফিসিয়াল পাসপোর্টে রূপান্তর করেন।
ওই পাসপোর্ট ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট পাসপোর্টধারী ব্যক্তিরা অবৈধভাবে বিভিন্ন দেশে যান এবং বসবাস করছেন। এ রকম ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহারকারী ৪ জন বাংলাদেশি ব্যক্তি তুরস্ক পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন এবং তাদের জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটিত হওয়ার পর তুরস্ক সরকার তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠান। এ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি জানাজানি হলে অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক। করা হয় মামলা। মামলার তদন্ত শেষে তদন্ত কর্মকর্তা ৭১ জন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৭১/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় চার্জশিট দাখিলের সুপারিশ করেন।