Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৩ শনিবার, মে ২০২৫ | ২০ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

৪র্থ উন্নয়নমেলায় বাংলাদেশের প্রশংসায় কানাডিয়ানরা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ১১:১৬ AM
আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ১১:১৮ AM

bdmorning Image Preview


কানাডায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের সভাকক্ষে ৪র্থ বাংলাদেশ উন্নয়নমেলার আয়োজন করে। মেলায় কানাডিয়ান সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের ভূয়সি প্রশংসা করেছেন।

বাংলাদেশ হাইকমিশন অটোয়া, কানাডায় ৪ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬ থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়।

উৎসবমূখর এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য, পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কূটনৈতিক মহলের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বুদ্ধিজীবী, প্রবাসী বাংলাদেশীসহ সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

মিশনের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান ফারহানা আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানটি প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন, আলোচনা অনুষ্ঠান, পাওয়ার পয়েন্ট প্রজেকশন, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নৈশভোজ ইত্যাদি আকর্ষণীয় পর্বে সাজানো ছিল। অনুষ্ঠানের সম্মানিত আলোচকদের ফুল দিয়ে বরণ করেন হাইকমিশনের প্রথম সচিব মিজ অপর্ণা রাণী পাল।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সাম্প্রতিক সময়ে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যুগান্তকারী এবং অনুসরণীয় অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে নির্মিত কতিপয় প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। তথ্যবহুল এ সকল প্রামান্যচিত্র উপস্থিত অতিথিদের মাঝে ব্যাপক সমাদৃত হয়।

আলোচনা অনুষ্ঠানে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বুদ্ধিজীবীগণ বক্তব্য রাখেন। অন্টারিও প্রদেশের ন্যাপিয়ান থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য চন্দ্রা আরিয়া, তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির বিষয় তুলে ধরে বর্তমান সরকারকে অভিনন্দন জানান।

তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতিকে অন্যান্য দেশের জন্য অনুসরনীয় বলে উল্লেখ করেন। বিশেষত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDG) বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সফলতার কথা এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্রগতিরও প্রসংশা করেন। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা করে বাংলাদেশের চলমান অগ্রগতির ধারা বেগবান করতে তাদের অবদানের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন।

অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের অধ্যাপক নিপা ব্যানার্জি, তাঁর উপস্থাপনায় বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রযাত্রার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন।

স্থানীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর গিলায়ান ফ্রস্ট তাঁর বক্তব্যে বর্তমান সরকারের সময়ে বাংলাদেশ ও কানাডার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের ঐকান্তিক উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সহযোগিতার কথা পূনর্ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDG) অর্জনে এবং টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনের অগ্রগতির জন্য অভিনন্দন জানান।

এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক জ্যানেট ডারমো বাংলাদেশের সামাজিক সূচকের অগ্রগতির বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আশ্বাস ব্যক্ত করেন।

কানাডার ট্রেড ফেসিলেটিং অিফসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর স্টেভ টিফম্যান ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের বিকাশ এবং এর মাধ্যমে নারীর ক্ষমাতায়নের সফলতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তিনি এ সকল ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সহযোগিতার বিষয়ে আলোকপাত করেন।

এরপরে কানাডার সাক্সাচুয়ান প্রদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল রব নরিস বক্তব্য রাখেন। তিনি সাক্সাচুয়ান প্রদেশের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিশদ বিবরণ দেন এবং এ প্রদেশে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের প্রশংসা করেন।

কানাডা নিবাসী শিক্ষাবিদ মঞ্জুর চৌধুরী বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বর্তমান সরকারের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' কর্মসূচির সফলতার বর্ণনা করে তৃনমূল পর্যায়ে তার প্রসারের উপর আলোচনা করেন।

হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) মিয়া মোঃ মাইনুল কবির একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রজেকসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের অনুকরণীয় সফলতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়া টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতির উপরে আলোকপাত করেন।

প্রথম সচিব (বাণিজ্যিক) মোঃ শাকিল মাহমুদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং বাংলাদেশ-কানাডা দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্যের পরিসংখ্যানসহ বাংলাদেশে ব্যবসা, বিনিয়োগ ও উন্নয়নের উপর নির্মিত পাওয়ার পয়েন্ট প্রজেকশনের প্রাণবন্ত উপস্থাপন করেন।

সভাপতির বক্তব্যে কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা নির্মাণের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফলতা, বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও বাংলাদেশ-কাডানার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক ছাড়াও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ করে রোহিঙ্গা সংকটে সরকার গৃহীত বিভিন্ন উদ্যেগের বিশদ বর্ণনা দেন।

তিনি এ অনুষ্ঠানকে সার্বিকভাবে সফল করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং বর্তমান সরকার গৃহীত ২০২১ ও ২০৪১ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কানাডা সরকার ও কানাডায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

আলোচনা পর্বের পরে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আগত অতিথিদের নিকট উপস্থাপনের লক্ষ্যে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সাংস্কৃতিক পর্বে হাইকমিশনের কাউন্সেলর (পাসপোর্ট ও ভিসা) মোঃ শাখাওয়াত হোসেন, কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান ফারহানা আহমেদ চৌধুরী এবং কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশী শিল্পি ডালিয়া ইসলাম অংশগ্রহণ করেন। সবশেষে অতিথিদের সম্মানে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী রসনার উপাদানের সমন্বয়ে এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়।

Bootstrap Image Preview