গত ৪ অক্টোবর পরীক্ষামূলকভাবে রাতের অফিস চালুর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাইদ খোকন। ওই রাতে ১১ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত অফিস করেন তিনি। মেয়রের পাশাপাশি সংস্থার বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাও অফিস করেন।
গত সপ্তাহের মতো আজ রাতেও খোলা থাকবে ডিএসসিসি কার্যালয়। আর রাতে (১১ টা থেকে ভোর ৫টা ) নগর ভবনে অফিস করবেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন। খবরটি নিশ্চিত করেছেন ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায়।
জানা গেছে, অনেক সময় নগরীর সেবাপ্রার্থীরা চাকরি বা ব্যবসার কাজে সারাদিনই ব্যস্ত থাকেন। তাদের জন্য দিনের বেলায় অফিস ছুটি নিয়ে বা ব্যবসা বন্ধ রেখে নগর ভবনে সেবা নিতে গেলে সমস্যার সম্মুখীন হন। সপ্তাহে একটা দিন নাইট শিফট চালু থাকলে তাদের জন্যও সুবিধা হয়।
এ ছাড়া যানজটের কারণে কেউ নগর ভবনে ছোট একটা কাজের জন্য গেলে পুরো দিনই নষ্ট হয়ে যায়। রাতে যানজট থাকে না। রাতে গেলে যানজটের ভোগান্তি থেকেও তারা রেহাই পাবেন। এতে করে যানজট নিরসনেও কিছুটা ফল মিলতে পারে। সর্বোপরি রাতে অফিস কার্যক্রম শুরু হলে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবারের দিনের ভয়াবহ যানজটও কিছুটা কমতে পারে। এতে করে সরকার রাজধানীর যানজট নিরসনের জন্য যে বহুমুখী প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে তাতে ফল মিলতে পারে।
প্রথম রাতের অফিসে দায়িত্ব পালনকালে মেয়র সাংবাদিকদের জানান, নগর সেবার কাজ ভাগ করে দিনের বেলায় চাপ কমাতে রাতের অফিসের সুফল পেলে তা নিয়মিত করা হবে। এই কার্যক্রমের সফলতা পর্যালোচনা করে রাতের শিফটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মেয়র খোকন সাংবাদিকদেরকে বলেন, ‘নাইট শিফট স্থায়ীভাবে চালু করা যায় কি না, সেটা চূড়ান্ত করতেই পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।’
আপাতত সপ্তাহে কেবল বৃহস্পতিবার রাতে এই শিফট চালু থাকবে। ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেলে তা দুই দিন করা হবে। এরপর হবে তিন দিন।
মেয়র বলেন, ‘যদি দেখা যায়, এতে নগর সেবার মান বেড়েছে, তাহলে চূড়ান্তভাবে নাইট শিফট চালু করবে ডিএসসিসি। তখন সপ্তাহের প্রত্যেক কর্ম দিবসেই দিনের পাশাপাশি রাতেও ডিএসসিসির অফিস সচল থাকবে।’
দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে নগর কর্তৃপক্ষ এই সেবা চালুর পর তা সফল হয়েছে বলেও জানান মেয়র খোকন।
জানা গেছে, বিশ্বের অনেক দেশেই স্বল্প পরিসরে সরকারি অফিস ছাড়াও বেসরকারি অনেক অফিস খোলা থাকে। কিছু অফিস তিন শিফটে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। এতে দিনের বেলার চাপ অনেকটাই কমে যায়। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক-পাতায়া-চিয়াংমাই, সিঙ্গাপুর সিটি, এমনকি ভারতেরও বেশকিছু শহরে রাতে অনেক অফিস খোলা থাকে।
এ ছাড়া বিশ্বে কিছু শহর রয়েছে যেখানে রাত-দিনের পার্থক্যও বোঝা মুশকিল। কিন্তু বাংলাদেশে রাতের বেলায় শহরগুলো একেবারেই নীরব হয়ে যায়। কিন্তু নগরীর যানজটের কারণে নগরবাসী কোনো সময় তার নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না। ফলে বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
২০১৬ সালে বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, রাজধানী ঢাকায় যানজটে দৈনিক অপচয় হয় ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা। বছরে ক্ষতি হয় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত ২৪ মার্চ প্রকাশিত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণায় বলা হয়, দুই বছরে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক নষ্ট হচ্ছে ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা। বছরে ক্ষতি হচ্ছে ৩৭ হাজার কোটি টাকা।