স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের ভিত্তিতে রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট এবং হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ মঙ্গলবার এ অভিযানে ব্যাপক অনিয়মের সন্ধান পায় দুদক।
প্রায় ৪ ঘন্টাব্যাপী হাসপাতালে অভিযানে দুদক টিম জানতে পারে, হাসপাতালে বেড প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ওয়ার্ডবয়দের ৫০০ - ১০০০ টাকা ঘুষ প্রদান করতে হয়। এছাড়াও সিরিয়াল ভেঙে ২০০ - ২৫০ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ইমারজেন্সি ইসিজি করানো হয়। এমনকি ডেথ সার্টিফিকেট নেওয়ার সময়ও ৪০০ - ৫০০ টাকা ঘুষ প্রদান করতে হয়।
অভিযান শেষে দুদক জানায়, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে জীবাণুনাশক অটোক্লেভ মেশিন ক্রয়ের উদ্যোগ নিলেও হাসপাতালে ২টি অকেজো মেশিন ব্যবহৃত হচ্ছে। অকেজো মেশিন মেরামতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিএমএইচডির সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোন সাড়া মেলেনি। ফলে জীবানুমুক্তকরণের ব্যবস্থা না করেই রোগীদের হৃদযন্ত্রের অপারেশন চলছে এবং গত আগস্টের পর ইনফেকশনে রোগী মৃত্যুর হার বেড়ে যাচ্ছে।
কারিগরি ব্যবস্থাপনায় মারাত্মক ত্রুটি ও অবহেলার কারণে রোগীদের মৃত্যু এবং সার্বিক অভ্যবস্থাপনার বিষয়ে হাসপাতালের প্রফেসর এম আর সিজারকে দুদক টিম জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, হাসপাতালের দুটি অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে একটি চালু আছে। অপরটিতে পানি পড়ার কারণে অপারেশন বন্ধ করে রিনোভেশন করা হচ্ছে। পানি পড়ার কারণে ইনফেকশন ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন। তিনি ওয়ার্ডবয় এবং আনসার সদস্যদের দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করেন এবং বলেন যে তাদের অপসারণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অতি শীঘ্রই এরূপ দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি দুদক টিমকে আশ্বস্ত করেন।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দুর্নীতির কারণে হৃদরোগ চিকিৎসা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে, দুদক অভিযোগ কেন্দ্রে এমন অভিযোগ আসলে প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরীর নির্দেশে চার সদস্যের একটি টিম এ অভিযান চালায়।
অভিযান প্রসঙ্গে দুদক এনফোর্সমেন্ট অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী বলেন, ‘হৃদরোগ হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অনুশাসন ভেঙে পড়েছে, এটা ক্ষমার অযোগ্য। এ ব্যর্থতা নিয়ে কারো দায়িত্বে থাকা উচিৎ নয়। দ্রুত এসব অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি দূর না করতে পারলে দায়িত্বপ্রাপ্তদের দুদকের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। এসব ঘটনার পেছনে দুর্নীতিই প্রধান কারণ, দুদক এ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করবে।’