চট্টগ্রাম নগরে হঠাৎ করে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় আবাসিক এলকার বাসা-বাড়ী ও হোটেল রেস্টুরেন্টে রান্না বানায় মারাত্মক ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া গ্যাস নির্ভর কলকারখানা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। কমে গেছে সিএনজি ষ্টেশন গুলোতে গ্যাসের চাপ। এতে নগরবাসীকে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে।
বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কাঠের চুলায় রান্না হয় এমন হোটেল ও ফাস্ট ফুডের দোকান থেকে খাবার সংগ্রহ করছে স্থানীয়রা। এদিকে গত তিন দিন ধরে গ্যাস সংকটের কারণে ধরে নগরীর চান্দগাঁও, বাকলিয়া, বাদুরতলা, চকবাজার, দামপাড়া, কাজীর দেউরি, পাঁচলাইশ, খুলশী, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, শুলকবহরসহ আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। নগরীর কয়েকটি এলাকায় গ্যাস একেবারে ছিলো না।
আবার কিছু কিছু এলাকায় অল্পস্বল্প পাওয়া গেলেও তা রান্না করার মতো যথেষ্ট ছিলো না। তাই বাধ্য হয়ে গৃহিনীরা কেরোসিন স্টোভ, ইলেকট্রিক চুলা, সিলিন্ডার গ্যাস ও ইট দিয়ে অস্থায়ী চুলা তৈরি করে রান্নার কাজ সেরেছেন। অন্যদিকে গৃহকর্তাদের হোটেল রেস্টুরেন্টেও ভিড় করতে দেখা গেছে।
নগরীর কাজির দেউরি এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী আয়েশা বেগম বলেন, গত তিনদিন ধরে এক মিনিটের জন্যও চুলা জ্বলেনি। তাই ইলেকট্রিক চুলায় রান্নার কাজ করতে হচ্ছে। চকবাজারের গৃহিনী শামসাদ শিমুল বলেন, আজ সকালে গ্যাসের হালকা চাপ ছিলো। অনেক কষ্টে তরকারি রান্না করতে পেরেছি। গ্যাসের চাপ থাকায় রাইচ কুকারে ভাত রান্না করেছি।
পেট্রোবাংলার এলএনজি সেলের প্রকৌশলীরা বলেন চট্টগ্রামে গ্যাস সংকট সৃষ্টি হওয়ার কারণ হল মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালের সঙ্গে সমুদ্রের তলদেশের পাইপলাইনের মধ্যবর্তী সংযোগস্থলের হাইড্রোলিক ভাল্বটি এখন কাজ করছে না। এতে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলে গত ১৮ আগস্ট থেকে এলএনজি টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়। কিন্তু পানির তলদেশে ৪০ মিটার নিচে থাকা হাইড্রোলিক ভাল্বটি গত শনিবার অতিরিক্ত চাপে অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে।
এদিকে সংকট সৃষ্টি হওয়ায় গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ। এতে বন্ধ হয়ে গেছে চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল)। একইসঙ্গে দুই শতাধিক শিল্প কারখানার উৎপাদন কমে গেছে। সিএনজি স্টেশনে কমে গেছে গ্যাসের চাপ। বাসা-বাড়িতে গ্যাস না থাকায় গৃহিণীরা কেরোসিন স্টোভ, ইলেকট্রিক চুলা ও ইট দিয়ে অস্থায়ী চুলা তৈরি করে রান্নার কাজ সারছেন।
জানা গেছে, এলএনজি টার্মিনাল থেকে ৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পায় কেজিডিসিএল। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। গ্রাহকদের কাছে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। গত সোমবার জাতীয় গ্রিড থেকে ২১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেছে।
বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি সরবরাহের মাধ্যমে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট দেয়া হতো। পাইপলাইনে ত্রুটির ফলে এখন গ্যাস সরবরাহ ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, মহেশখালীর মাতারবাড়ী টার্মিনালে কারিগরি ক্রটি সারাতে কাজ করছে এলএনজি সরবরাহে দায়িত্বপ্রাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি অ্যাক্সিলারেট অ্যানার্জি।
কেজিডিসিএল’র ব্যবস্থাপক (কাস্টমার অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) প্রকৌশলী অনুপম দত্ত বলেন, গত শনিবার রাতে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আগামী ১৫ নভেম্বরের আগে এলএনজির সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাই আমরা আপাতত জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি।