Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ শনিবার, মে ২০২৫ | ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের দুই বছর আজ, ক্ষতিপূরণ দাবি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৩১ PM
আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৮, ০৯:৩১ PM

bdmorning Image Preview


ফরহাদ আকন্দ, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মে আদিবাসী সাঁওতালদের বাপ-দাদার সম্পত্তি ফেরত পাওয়া নিয়ে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আন্দোলনে মারা যান তিন জন। এ ঘটনায় আহত হন আরও বেশ কয়েকজন।

ওইদিন বাগদাফার্ম ইক্ষু খামারে আখ কাটার কথা বলে সেখানে গড়ে ওঠা আদিবাসীদের বসতি উচ্ছেদ করতে গেলে আদিবাসীদের প্রতিরোধের মুখে পুলিশের গুলিতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের শ্যামল হেমরম, মঙ্গল মার্ডি ও রমেশ টুডু নিহত হন। সাঁওতাল পল্লীতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের দুই বছরপূর্তি উপলক্ষে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ ও জন উদ্যোগের আয়োজনে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহীদ মিনারে আদিবাসী-বাঙালি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের শুরুতে এক শোক র‌্যালি ঘটনাস্থল সাঁওতালপল্লী মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে বের হয়ে দীর্ঘ ১২ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহীদ মিনারে এসে সমবেত হয়। সে সময় নিহত তিন আদিবাসীর স্মরণে পৌর শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্বলন করার পর ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সমাবেশে যোগ দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, সেখানে যে হত্যাকাণ্ড, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।

তিনি আরও বলেন, এ রকম একটি নিষ্ঠুর, অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করার মতো ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে ঘটা আমাদের জাতির জন্য লজ্জাজনক।

সুলতানা কামাল বলেন, আমরা যদি নিজেদের মানুষ হিসেবে মনে করি, তাহলে যেসব মানুষের অধিকার হরণ হচ্ছে, তাদের তাদের পক্ষে দাঁড়াতে হবে। আমরা জোর গলায় বলতে চাই, এই মানুষেরা ঠিক যে অবস্থায় ছিল, সেই জায়গায় তাদের ফিরিয়ে আনা হোক। তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হোক। যাতে তারা যেভাবে জীবন চালাচ্ছিল, অন্তত সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারে।

ঐক্য ন্যাপ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, গত ৬ নভেম্বর ২০১৬ গাইবান্ধা জেলার সাহেবগঞ্জ ও বাগদা ফার্ম এলাকায় পরিকল্পিতভাবে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ ও বাঙালি কৃষকদের ওপর আক্রমণ চালায়। পুলিশের উপস্থিতিতে চিনিকল মালিকের সন্ত্রাসীরা তাদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। পুলিশের গুলিতে তিন জন সাঁওতাল নিহত হয়।

সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, মানবাধিকার ও ভূমি অধিকারকর্মী শামসুল হুদা, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জেলা সভাপতি মিহির ঘোষ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ গাইবান্ধার আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম বাবু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ নওগাঁ জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল, ওয়ার্কার্স পার্টির রংপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সরকার, জেএসডি গাইবান্ধার জেলা সভাপতি লাসেন খান রিন্টু, জাসদ রংপুর মহানগর সভাপতি গৌতম রায়, ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাফরুল ইসলাম প্রধান, নারী আদিবাসী নেত্রী প্রিসিলা মুর্মু, আদিবাসী নেতা সুফল হেমব্রম, বার্নাবাস টুডু, দ্বিজেন টুডু, স্বপন শেখ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, তিন সাঁওতাল হত্যাকাণ্ড ঘটনার পর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে ৩৩ জন নামীয়সহ ৫ থেকে ৬শ' জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। কিন্তু গত দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সাঁওতাল হত্যাকাণ্ডের জড়িত সাপমারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলসহ মূল আসামিদের কেউই গ্রেফতার হয়নি।

অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত আদিবাসী পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ, নিহত তিন সাঁওতালের পরিবারে আর্থিক সহায়তা এবং বাপ-দাদার সম্পত্তি ফেরত দেয়ার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাজে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

Bootstrap Image Preview