১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত টানা চারবার বগুড়া-৬ (সদর) আসনটি ছিল বেগম খালেদা জিয়ার দখলে। বলা ছলে আসনটি জিয়া পরিবারের জন্য সংরক্ষিত একটি আসন। এই আসন থেকে এমপি হয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া।
এবার প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। খালেদা জিয়া জেলে। ছেলে তারেক রহমানও সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তাই তারা যদি অনুপস্থিত থাকে, এই আসনে তারেকের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে চায় বগুড়াবাসী।
বগুড়ার এই আসনটির বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতে এই আসন থেকে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান কিংবা জিয়া পরিবারের উত্তরসূরিকেই চান তারা। যদিও এরই মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য মনোনয়ন ফরম কেনার মধ্য দিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে বিএনপি। এর মধ্যে দুটি হলো বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন।
অতীতের দিকে তাকালে দেখা যায়- বগুড়ার এই দুই আসন থেকে জয়লাভের পর বগুড়া-৬ আসন নিজের জন্য রেখে বগুড়া-৭ আসনটি ছেড়ে দিতেন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে উপ-নির্বাচন করে দলের কোনো এক সিনিয়র নেতাকে দেয়া হতো। তবে এবার বেগম জিয়া আদৌ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না সেটি এখনও স্পষ্ট নয়। এ কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, বেগম জিয়া না হলে জোবাইদা রহমান কিংবা জিয়া পরিবারের উত্তরসূরিকেই চান তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বগুড়ার একাধিক বিএনপির নেতা বলেছেন, জিয়া পরিবার ছাড়াও বগুড়ার এই দুটি আসনে অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। যারা ধানের শীষে নির্বাচন করে জয়ী হওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে তারা চান জিয়া পরিবারের উত্তরসূরিদের কেউ এখানে নির্বাচন করে ঐতিহ্য ধরে রাখুক। কারণ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মভূমি বগুড়া।
এই আসনে বিএনপির প্রার্থী লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মতো সাধারণ মানুষের দাবি, এখানে জিয়া পরিবারের কেউ একজন নির্বাচন করুক। সেক্ষেত্রে বেগম জিয়ার বিকল্প হতে পারেন জোবাইদা রহমান।
বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় জেলার শীর্ষ নেতারা বিষয়টি জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন, কে হচ্ছেন এই আসনের প্রার্থী। বেগম জিয়া যদি নির্বাচন করতে না পারেন সেক্ষেত্রে জোবাইদা রহমানকে এগিয়ে রাখছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাফতুন আহম্মেদ খান রুবেল বলেন, আমরা এখনও নিশ্চিত নই, কে প্রার্থী হচ্ছেন। তবে আমরা চাই খালেদা জিয়া অথবা জিয়া পরিবারের উত্তরসূরি এই দুই আসন থেকে নির্বাচন করুক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, আইনি জটিলতায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কিংবা অন্য কোনো কারণে তার পরিবারের সদস্যদের কেউ যদি নির্বাচনে অংশ না নিতে পারেন এক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের মধ্য থেকে প্রার্থী বেছে নেয়া ছাড়া বিকল্প থাকবে না। ফলে এখন থেকে পুরো পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে হচ্ছে স্থানীয় নেতাদের। তবে খালেদা জিয়ার মনোনয়নের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান ও মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। খালেদার বিকল্প হিসেবে আসতে পারেন তারাও।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমান বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ এখনও আছে। বরাবরের মতো বগুড়ার দুটি আসনে নির্বাচন করবেন ম্যাডাম। এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তবে কোন কারণে যদি ম্যাডাম নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন সেক্ষেত্রে বিকল্প প্রার্থী নির্ধারণ করবে কেন্দ্রীয় কমিটি।
বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা নির্দেশের অপেক্ষায় আছি। শীর্ষ নেতারা যেভাবে নির্দেশ দেবেন, সেভাবেই কাজ করব। কোথায় কাকে দেয়া হবে বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এ দিকে বেশ কিছু নেতাকর্মী বলছেন, খালেদা জিয়া কিংবা জিয়া পরিবারের কেউ প্রার্থী হতে না পারলে দলের দুই শীর্ষ নেতা বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বগুড়া পৌরসভার মেয়র অ্যাডভোকেট মাহবুবর রহমান ও বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনে সাবেক এমপি এবং জিয়া পরিবারের আস্থাভাজন হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু বিকল্প হতে পারেন।
প্রসঙ্গত, খালেদা জিয়ার জন্য ফেনী-১ আসনে ফখরুল, বগুড়া-৬ আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং বগুড়া-৭ আসনে স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। তিনজনের হাতে মনোনয়ন ফরম তুলে দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।