Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৪ রবিবার, মে ২০২৫ | ২১ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

প্রতিটি মানুষের হাতে কাজ দেয়ার দাবি এমডব্লিউইআরের

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৮, ০৪:৫৬ PM
আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৪:৪৫ PM

bdmorning Image Preview


স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রতিটি মানুষের হাতে কাজ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস (এমডব্লিউইআর)।

আজ বুধবার (১৪ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতিতে “একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও তরুণ সমাজ” শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলনে এ দাবি জানায় সংগঠনটির সদস্যরা। এ সময় সংগঠনটির পক্ষ থেকে ৪টি দাবি পেশ করা হয়।

সংগঠনটির প্রথম দাবি হলো, বাংলাদেশের শিক্ষাখাতে সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাজেটের ভিতরে এনে সুপরিকল্পিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি ব্যক্তি যেন শিক্ষা ব্যবস্থার আওতায় চলে আসে। যারা শিক্ষার আলো থেকে ঝরেপড়ে তাদেরকে কর্মক্ষম করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিজ্ঞানসম্মত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা দরকার। শুধু দেশ নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যেন শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা যায় সে ধনের সিলেবাস প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

প্রত্যেক মানুষের খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে দ্বিতীয় দাবিতে বলা হয়, মানুষ প্রয়োজনীয় খাবার না পেয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহ আরও সুলভ করা প্রয়োজন। খাদ্য উৎপাদনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভর্তুকিসহ আরো সহজ শর্তে ঋণ, অনুদান দিতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সকলকে পারদর্শি করার যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তৃতীয় দাবি হলো চিকিৎসা খাত নিয়ে। সংগঠনটির মতে চিকিৎসাখাতটি এখন অনেকাংশে বেসরকারি হাতে চলে যাচ্ছে। এতে প্রচুর ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের জন্যে কষ্টসাধ্য হচ্ছে। কমিউনিটি হাসপাতাল, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে আরও সম্প্রসারণ করা ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা প্রয়োজন। সকল নাগরিককে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করাসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বশীলতা আরও বৃদ্ধি ও পর্যবেক্ষণ করা দরকার।

মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস এর চতুর্থ দাবি হলো কর্মসংস্থান নিয়ে। প্রতিটি ব্যক্তিকে কর্মস্থানের মধ্যে আনতে হবে। ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রতিটি মানুষের হাতে কাজ চাই’ এই শ্লোগানে কাউকেই আর শ্রমবিহীন রাখা যাবে না। সবাইকে যোগ্যতা ও স্বামর্থ অনুযায়ী কাজে নিয়োজিত করার যাবতীয় কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি দেশিয় শিল্প-বাণিজ্য, বৈদেশিক বাণিজ্য, কূটনৈতক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক নিরাপত্তা, তথ্য-প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, খনিজ ও জ্বালানী, প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানো, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের যাবতীয় প্রযুক্তি-প্রশিক্ষণ, শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, ক্রীড়ান্নোয়ন, সবক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা।

সাংবাদিক সম্মেলনে মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস আহ্বায়ক ফারুক আহমাদ আরিফ লিখিত বক্তব্যে বলেন, মানুষের পরিচয়ই হচ্ছে তার কাজ। কাজ যদি না থাকে তবে মানুষের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত (২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী) সর্বশেষ ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপে জানা যায়, দেশে মোট কর্মোপযোগী মানুষের সংখ্যা ১০কোটি ৯১ লাখ। এরমধ্যে কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ। বাকি ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ কর্মক্ষম তবে শ্রমশক্তির বাইরে। তাদের মধ্যে ১৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৮০ হাজার। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ। এক্ষেত্রে এক বছরে বেকার বেড়েছে ৮০ হাজার। উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১১ দশমিক ২ শতাংশ। কর্মে নিয়োজিত ৬ কোটি ৮ লাখ মানুষের মধ্যে কৃষিক্ষেত্রে ২ কোটি ৪৭ লাখ, শিল্পে ১ কোটি ২৪ লাখ এবং সেবা খাতেযুক্ত ২ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ। কর্মক্ষম তবে শ্রমশক্তির বাইরে থাকা ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজারের মধ্যে নারীর সংখ্যা তিন কোটি ৬৩ লাখ ৩৩ হাজার এবং পুরুষ ১ কোটি ১৯ লাখ ৪৭ হাজার। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)র তথ্যানুযায়ী দেশের মোট বেকার জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশই যুবক। এসব যুবকের প্রায় ৩০ শতাংশের কোনো কর্ম, প্রশিক্ষণ বা শিক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। (৫ নভেম্বর-২০১৮) ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে পদার্পণ করবে। সে উপলক্ষে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে প্রতিটি মানুষের হাতে কাজ চাই’। এ ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকারই এর ব্যবস্থা করবে বলে তিনি দাবি করেন। কিভাবে পরিকল্পনা নিলে দেশের প্রতিটি মানুষকে শ্রমে নিয়োজিত করা যায় সেই চিন্তাটি সামনে রেখে যেন নির্বাচনী ইশতিহার প্রণয়ন ও নির্বাচিত হওয়ার পর তা বাস্তবায়ন করা হয় তা আশা করছি।

সাংবাদিক সম্মেলনে ‘বিচার বিভাগ ও সুশাসন’ শীর্ষক বক্তব্যে মো. রায়হান ওয়াজেদ চৌধুরী বলেন, কোনো দেশে আইনের শাসন কার্যকর হয় বিচার বিভাগের মাধ্যমে। বিচার বিভাগ স্বাধীন না হলে আইনের শাসন সম্ভব নয়। বিচার বিভাগে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হলে এবং দলীয় প্রভাবমুক্ত না হলে স্বাধীনভাবে কাজ করা সম্ভব হয় না। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এসব বন্ধ করা উচিত।

মাইগ্রেশন ও রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কে এ এস এম সুজাউদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের অনেক শিক্ষিত মানুষ বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্যে গেলেও খুব কম সংখ্যক দেশে ফিরে আসে। তারা দেশের মানুষের অর্থে শিক্ষিত হয়ে তাদের কল্যাণে কাজে না এসে নিজের আখেরেেগাচাচ্ছে। এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।

তিনি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বলেন, মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রিত। তাদেরকে দ্রুত নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

‘গণমাধ্যম ও তরুণ সমাজ’ শীর্ষক বক্তব্যে সাব্বির আহমেদ বলেন, গণমাধ্যমের কাজ হলো জনগণের স্বার্থ ফুটিয়ে তোলা। তাই গণমাধ্যমের স্বাধীন ভূমিকা পালন নিশ্চিত করতে হবে।

গাজী আনিস বলেন, এদেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা। দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এক্ষেত্রে দেখা গেছে পরিকল্পনার অভাব। একই ভবনে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতেও দেখা গেছে। শিক্ষাকে ব্যবসা হিসেবে পরিগণিত করা হচ্ছে। এটা অনুচিৎ, শিক্ষায় তারতম্য সৃষ্টি হচ্ছে। এটা আগামী প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর। ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

এনায়েত রাফি কৃষি সম্পর্কে বলেন, কৃষিশিল্পকে আরও যুগপোযুগি করে গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উৎপাদিত দ্রব্যমূল্যের যথাযথ দাম  নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ওয়ার্ড পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে হবে।

সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে আসাদুল্লা বলেন, মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস এর 'একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও তরুণ সমাজ' শীর্ষক সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ায় আপনাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আগামীতেও আমরা সবাই মিলে এক সাথে কাজ করবো।

Bootstrap Image Preview