বর্ষার ফুল শাপলা। কোন প্রকার আবাদ ছাড়াই বিস্তীর্ন আবাদি জমি এবং পুকুর জলাশয়ে বর্ষা এলেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য় নিয়ে পানির মাঝেই ফুটে ওঠে এ ফুল। নানা রংয়ের নয়াভিরাম শাপলার প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয় মানুষ। রং-বেরংয়ের শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত।
পটুয়াখালীর বিভিন্ন এলাকার খাল-বিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত হাজার হাজার শাপলা ফুল। কিন্তু জমিতে অধিক মাত্রায় আগাছা নাশক কীটনাশক প্রয়োগসহ জলবায়ু পরিবর্তন জনিত প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় লবনাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ অঞ্চল থেকে ক্রমশই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে শাপলা। ফলে কয়েক বছর আগেও গ্রামের পর গ্রাম ঘুরলেও শাপলার এমন বাহারী সৌন্দর্যের দেখা মিলত না। একসময় হাটে বাজারে সবজি হিসাবে শাপলা বিক্রি হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে এর দেখা মিলত না।
কৃষি বিভাগ জানায়, প্রকৃতিতে দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে শাপলা। নান্দনিক রূপ ফুটিয়ে বর্ষায় আবার ভরে উপকূলীয় এলাকায় বিল, জলাশয়। শুস্ক মৌসুমে চাষাবাদের জন্য মিস্টি পানির সংরক্ষন এবং কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে আনার ফলে শাপলার বংশ বৃদ্বি দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন হাটে বাজারে সজবি হিসাবে বিক্রি হচ্ছে শাপলা।
বর্ষার শুরু থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলের বিল, জলাশয় ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতো শাপলা। এ অঞ্চলে কয়েক রংয়ের শাপলা ফুটলেও সাধারণত লাল ও সাদা রংয়ের শাপলার আধিক্য ছিল বেশি। লাল ও সাদা রংয়ের শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। এর মধ্যে লাল ও সাদা ফুলের শাপলা সবজি হিসেবে মানুষ খেয়ে থাকে। মাটির নিচের মূল অংশকে বলা হয় শালুক। শাপলার এর ফল দিয়ে এলাকার মানুষ খৈ ভাজতো। যা ঢ্যাপের খৈ বলে পরিচিত। শাপলার রয়েছে ভেজষ গুণ। লাল রংয়ের শাপলা ঔষধী কাজে ব্যবহৃত হয়। শাক-সবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুনও খুব বেশি। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে। শাপলা চুলকানী ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আভাসের প্রকল্প কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, চাষের জমিতে মাত্রাতিরিক্ত বালইনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে দিন দিন মাটির নিচে থাকা শালুক মরে যাচ্ছিল। এছাড়া নিচু জলাশায়ের জমি ভড়াট করে বসত-বাড়ী স্থাপন করায় শাপলার বংশ বিস্তার কমে যাচ্ছে। এছাড়া পুকুর এবং জলাশয় মাছ চাষের উপযোগী করার জন্য কীটনাশক ব্যবহৃত হত। এর ফলেও মরে যেত শাপলার শালুক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মন্নান বলেন, খাল-বিল ও আবদ্ধ জলাশয়গুলো দিন দিন শুকিয়ে যাওয়ার কারনে শাপলার শালুক নষ্ট হচ্ছে। এর ফলে শাপলার বংশ বিস্তারে বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে ক্ষুদ্র জলাশয়সহ দখল হয়ে যাওয়া খাল গুলো উদ্বার এবং পুন:খননের ফলে এখন শাপলার ক্রমশই আধিক্য বাড়ছে শাপলার।