Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০২ শুক্রবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

চীনা বন্দিশিবিরে নারকীয় অত্যাচারের শিকার উইঘুর নারী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:১৮ PM
আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৮, ০৮:১৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


চীনের উইঘুর প্রদেশেই জন্ম মিহিরগুল তুরসুনের। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে মিসরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি পড়তে যান তিনি। সেখানেই প্রেম, বিয়ে। তিনটি সন্তানের জন্মও দেন তুরসুন।

২০১৫ সালে নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে চীনে ফেরেন তিনি। সঙ্গে ছিল তার তিন সন্তান। এরপরই বদলে যায় তার জীবন। বাচ্চাদের থেকে আলাদা করে তাকে বন্দিশিবিরে নিয়ে যায় চীন সরকার। বিভিন্ন দফায় তিন বার তাকে আটক করা হয়। চালানো হয় নারকীয় অত্যাচার।

মাকে না পেয়ে অযত্নে মারা যায় তার ছোট সন্তান। বাকি দুই সন্তানও এখনও দুরারোগ্য অসুখের শিকার।সোমবার ওয়াশিংটনে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীন সরকারের এই বর্বরতার কাহিনি শোনাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন মিহিরগুল তুরসুন।

উইঘুর প্রদেশের মুসলিমদের ওপর চীন সরকারের অত্যাচারের অভিযোগ এই প্রথম নয়।  চীনের  বিভিন্ন বন্দিশিবিরে আনুমানিক ২০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের।

সোমবার আমেরিকার ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে পৃথিবীর ২৬টি দেশের ২৭০ জন গবেষক ও সমাজকর্মী উইঘুরদের ওপর অত্যাচার নিয়ে সারা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে যৌথ বিবৃতি দেন। সেখানেই আনা হয়েছিল মিহিরগুল তুরসুনকে।

‘অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমি বারবার ওদের কাছে আমাকে মেরে ফেলতে অনুরোধ করেছি’, জানিয়েছেন মিহিরগুল। একই সঙ্গে তিনি সামনে এনেছেন তার ওপর চলা ভয়াবহ অত্যাচারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ।

২০১৫ সালে দেশে ফেরার পর তাকে তিন মাসের জন্য আটকে রাখা হয়েছিল বন্দিশিবিরে। এই সময়েই মারা যায় তার কনিষ্ঠ সন্তান। শুধু তাই নয়, বাকি দুই সন্তানের ওপরও বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন মিহিরগুল।

দুই বছর পর তাকে ফের আটক করা হয় বন্দিশিবিরে। কয়েক মাস বন্দি রেখে নিরন্তর অত্যাচার চালানো হত তার ওপর। ছেড়ে দেওয়ায় সাত মাস পর আবার বন্দি করা হয় তাকে। এই দফায় তাকে বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছিল তিন মাসের জন্য।

বন্দিদশায় তাকে বিভিন্ন অজানা ওযুধ খেতে বাধ্য করা হত বলে জানিয়েছেন মিহিরগুল। এই ওষুধ খেয়ে অনেক সময়ই জ্ঞান হারিয়ে ফেলতেন তিনি। যে কক্ষে তাকে রাখা হয়েছিল, সেখানে তিন মাসের মধ্যে নয়জন নারী মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সেখানে ক্যামেরার সামনে তাকে মলমূত্র ত্যাগ করতে হত। চীনের  কম্যুনিস্ট পার্টির স্তূতিতে গান করতে বাধ্য করা হতো যখন তখন।

তার কথায়, ‘এক দিন আমাকে ন্যাড়া করে হেলমেটের মতো কিছু একটা পরিয়ে একটা চেয়ারে বসানো হয়। ইলেকট্রিক শক দেওয়ার সময় ভীষণভাবে কাঁপছিলাম আমি। যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ছিল আমার শিরা আর ধমণিতে। তারপর আর কিছু মনে নেই। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। শুধু মনে আছে, আমি উইঘুর বলে ওরা আমাকে গালি দিচ্ছিল।’

এরপর সন্তানদের নিয়ে মিশর যাওয়ার অনুমতি পান মিহিরগুল। কায়রো পৌঁছেই মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ করে নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি। তাকে আশ্রয় দেয় আমেরিকা। এই মুহূর্তে তিনি বসবাস করেছেন আমেরিকার ভার্জিনিয়ায়। ভুলে যেতে চান নিজের পিতৃভূমির ভয়াবহ স্মৃতি।

আনন্দবাজার জানায়, এই ধরনের বন্দিশিবির থাকার কথা অস্বীকার করেছে চীন সরকার। কিন্তু অপরাধীদের জন্য উইঘুর প্রদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা থাকার কথা জানিয়েছে তারা।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার আড়ালেই বন্দিশিবির চালাচ্ছে বেইজিং। পুরো চীন জুড়ে ‘এক শিক্ষা, এক সংস্কৃতি’ চালু করতে বেইজিং সরকারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার উইঘুর মুসলিমরা, এমনটাই অভিযোগ তাদের।

এই অত্যাচারের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে অনেকেই উইঘুর প্রদেশ ছেড়ে জীবন বিপন্ন করে পালাচ্ছেন এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকায়। শুধু উইঘুর নয়, চীন সরকারের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার এই অঞ্চলের কাজাখ মুসলিমসহ আরও বেশ কিছু প্রাচীন জনজাতি, এমনটাই জানাচ্ছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

Bootstrap Image Preview