মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) মধ্যরাতে বাংলাদেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা আমজাদ হোসেনকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আর তার সঙ্গে রয়েছেন দুই ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল ও সোহেল আরমান।
তার ছোট ছেলে নির্মাতা ও অভিনেতা সোহেল আরমান বুধবার (২৮ নভেম্বর) মধ্য রাতে ফেসবুকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা আমজাদ হোসেনের একটি ছবি পোস্ট করে আবেগঘন কিছু কথা লিখে শেয়ার করেন। তার লেখা সেই পোস্টটিতে বাবার সুস্থ হয়ে ফিরে আশার অপেক্ষার কথাটাই জানান তিনি।
সোহেল আরমান ফেসবুকে লেখেন,‘বাবা পরম যত্ন আর সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পাচ্ছেন। সন্তান হয়ে এটাই চেয়েছিলাম যে, বাবার নিঃশ্বাস যতক্ষণ থাকবে তিনি যেন সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাটিই পান। আর আমাদের সেই চাওয়াটা পূর্ণ হয়েছে। বামরুনগ্রাদ হাসপাতালের আইসিইউ’র (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) পাশে আমি আর বড় ভাইয়া (সাজ্জাদ হোসেন দোদুল) বাবার ফিরে আসার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছি। অপেক্ষায় আছি কখন ডাক্তার এসে বাবাকে নিয়ে একটু আশার বাণী আমাদের দেবেন।’
তিনি আরও লেখেন, ‘সন্ধ্যার দিকে যখন এক মেডিকেল ছাত্রী বাবাকে দেখে এসে আমাকে বললেন,‘আপনার বাবার হৃদস্পন্দনটা এখনও অনেক ভালো। আর তার জোরেই নাকি বাবা এখনও অনেক গুরুতর ধকল সইতে পারছেন। আমি সেই সময় মনে মনে বলি আমার বাবার হৃদয়তো অনেক শক্তিশালী হবেই। কারণ তার হৃদয়টা যে অনেক বড়। সেটা আকাশের চেয়েও বড়। তার এই হৃদয়টা দিয়েই সবাই কে অকৃপণভাবে উজাড় করে ভালোবেসে গেছেন আর তার অনবদ্য সকল শিল্পকর্মগুলো সৃষ্টি করেছেন। তাই বাবার হৃদয়টাই যেন মৃত্যুর কাছে হার মানতে চাইছে না। এখনো খুব দূর থেকে হলেও সেটার আলো জ্বলছে এবং আশার বাণী পাঠাচ্ছে।’
‘বাবা সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসে, তোমার সুস্থ হয়ে ফিরে যাবার অপেক্ষায় আছে, দোয়া পড়ছে। এখনও আশার আলো দেখছে সবাই। বাংলাদেশ থেকে এই বিদেশের মাটিতে হাসপাতালের প্রতিটি মানুষ যারা বাবার চিকিৎসায় নিয়োজিত আছেন তারা কেউই চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছেন না। এ জন্য আমি তাদের সবার কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
দেশরত্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সোহেল আরমান লেখেন,‘বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য থাকলো হৃদয়ের গভীর থেকে কৃতজ্ঞতা,শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। আপনার জন্যই সম্ভব হয়েছে বাবার জন্য বিদেশে সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করা। আর বাকিটা এখন শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা।’
সর্বশেষে ‘এইতো প্রেম’ খ্যাত নির্মাতা লেখেন, ‘এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। হাসপাতালের জানালা দিয়ে আকাশের তারা দেখি, সময় যেন আর কাটছে না। বাবা তোমার ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি।’
গত ১৮ নভেম্বর আমজাদ হোসেন নিজ বাসভবনে হটাৎ করে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে দ্রুত রাজধানীর আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ভর্তি করা হয় তেজগাঁওয়ের ইমপালস হাসপাতালে এবং সেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
এদিকে আমজাদ হোসেনের উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ রোববার (২৫ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪২ লাখ টাকা তার পরিবারকে দিয়েছেন। যার মধ্যে ২০ লাখ টাকা দিয়েছেন তার উন্নত চিকিৎসার খরচ বাবদ এবং বাকী ২২ লাখ টাকা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বাবদ।
আমজাদ হোসেন ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ও ‘ভাত দে’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন এবং শিল্পকলায় অবদানের জন্য (১৯৯৩) সালে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারও তিনি পেয়েছেন।