টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া বইছে সর্বত্র। দিন যতোই পার হচ্ছে ততোটাই ঘনিয়ে আসছে প্রতিনিধিত্বের পালাবদলের দিনক্ষণ। প্রযুক্তির এই অগ্রগতিতে দিনবদলের ভাবনা এখন তরুণদের হাতে, মোট ভোটারের সংখ্যায়ও উল্লেখজনক। যা এবারের সংসদ নির্বাচনে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে।
এ বছরের ৩১শে জানুয়ারীর নির্বাচন কমিশনের এক হিসেবমতে এবারে একদম নতুন ভোটার যারা ১৮ বছর বয়সী তাদের সংখ্যা ৪৬ লাখ। এছাড়া ২১ থেকে ২২ বছর বয়সী ভোটারদের সংখ্যা দারিয়েছে ৮০ লাখ ২৮ হাজার ৮৩৩ জন। অন্যদিকে শুধুমাত্র ২৭ বছর বয়সী ভোটার রয়েছে ১ কোটি ৮ লাখ ৮৪ হাজার ১৪৬ জন। আওয়ামী লীগ সরকারের গত দুই শাসনামলে ২ কোটি ৩৫ লাখ ১২ হাজার ৯৯৭ যোগ হয়েছে নতুন ভোটার।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষে হিসাব অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার ৬০১ জন। নতুন যোগ হয়েছিলো ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ৫৯৩ জন। এতে ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৯৭১ জন পুরুষ ভোটার ও নারী ভোটার যোগ হয়েছিলো ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৬২২ জন। অন্যদিকে মৃত ভোটারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৪ জন।
ভোটার হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মোট সংখ্যা (সম্ভাব্য) ১০ কোটি ৪৬ লাখেরও বেশী।
এই বিশাল সংখ্যাক তরুণদের একদিকে যেমন ক্ষমতার পালাবদলের শক্তি সামর্থর দিক রয়েছে তেমনি রয়েছে নিজেদের আগামী দিনের ভাবনা। আর এই ভাবনা বাস্তবায়নে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস (এমডব্লিউইআর) সহ বিভিন্ন প্লাটফর্ম, যারা বিশাল সংখ্যক তরুণদের দাবিকে পরিকল্পনা আকারে পেশ করছে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে।
আজ সোমবার সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ তরুণদের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপিকে ৬ দফা ইশতেহার দিয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে তুলে ধরেবে। বেকারত্ব নিরসনে কর্মসংস্থান, চাকরির নিয়োগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ও গবেষণা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-শিক্ষক ও যুব অ্যাসেম্বলির আলোকে ‘তারুণ্যের ইশতেহার ভাবনা’ শীর্ষক একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে।
এর নেতৃবৃন্দগণ বলেন, সত্যিকার অর্থে এ দেশের তরুণ, বিশেষ করে লাখ-লাখ শিক্ষিত বেকার কি চায়, আমাদের ইশতেহারে সেটিই উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা চাই, সব রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তারুণ্যের জন্য আলাদা প্রতিশ্রুতি দিক।
এর আগে ১৪ নভেম্বর সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে মুভমেন্ট ফর ওয়ার্ল্ড এডুকেশন রাইটস (এমডব্লিউইআর) তাদের দাবি জানিয়ছে।
১. শিক্ষাখাত: সরকারি-বেসরকারি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাজেটের ভিতরে এনে সুপরিকল্পিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার আলো থেকে ঝরে পড়ে তাদেরকে কর্মক্ষম করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আওতায় এনে বিজ্ঞানসম্মত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। শুধু দেশ নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও যেন শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করা যায় সে ধরনের সিলেবাস প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. স্বাস্থ্যখাত: কমিউনিটি হাসপাতাল, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোকে সম্প্রসারণ ও অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়িত্বশীলতা আরও বৃদ্ধি ও পর্যবেক্ষণ করা।
৩. খাদ্য সরবরাহ আরও সুলভ করা: খাদ্য উৎপাদনে নিয়োজিত ব্যক্তিদের ভর্তুকিসহ আরো সহজ শর্তে ঋণ, অনুদান প্রদান। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সকলকে পারদর্শি করার যাবতীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৪. কর্মসংস্থান: স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সবাইকে যোগ্যতা ও সামর্থ অনুযায়ী কাজে নিয়োজিত করার যাবতীয় কার্যক্রম হাতে নিতে হবে। পাশাপাশি দেশিয় শিল্প-বাণিজ্য, বৈদেশিক বাণিজ্য, কূটনৈতক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক নিরাপত্তা, তথ্য-প্রযুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন, খনিজ ও জ্বালানী, প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগানো, সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের যাবতীয় প্রযুক্তি-প্রশিক্ষণ, শ্রমজীবী মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন নিশ্চিতকরণ, ক্রীড়ান্নোয়ন, সবক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা।
৫. ‘বিচার বিভাগ ও সুশাসন’: বিচার বিভাগে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।
৬. গণমাধ্যম: গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
৭. মেধা প্রাচার বন্ধ করতে কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৮. যোগাযোগ: নৌ, রেল ও বিমান পরিবহনকে আধুনিক ও লাভজনক পর্যায়ে নেওয়ার লক্ষে বাংলাদেশের যোগাযোগব্যাবস্থার গতানুগতিক ধারা বদলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন।
প্রসঙ্গত, নিয়ম অনুযায়ী চলতি বছরের ৩০ শে অক্টোবর থেকে ২০১৯ সালের ২৮ শে জানুয়ারীর মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তার সাথে মিল রেখেই ৩০ শে ডিসেম্বর নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করেছে করেছে কমিশন।