Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২০ মঙ্গলবার, মে ২০২৫ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

আজ পটুয়াখালী মুক্ত দিবস 

জাহিদ রিপন, পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৩৩ PM
আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৩৮ PM

bdmorning Image Preview


আজ ৮ডিসেম্বর, পটুয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় পটুয়াখালী জেলা। যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীর হাতে শহীদদের গণকবরসহ স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো আজও রয়েছে অরক্ষিত। আর স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও জেলার মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে রয়েছে বিভ্রান্তি।

১৯৭১সালের ২৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টা পটুয়াখালীর আকাশে হানা দেয় পাক বাহিনীর দুইটি জঙ্গি বিমান। ক্রমাগত শেলিং করে গুড়িয়ে দেয় টিএন্ডটি টাওয়ারসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। অতর্কিত হামলায় দিশেহারা হয়ে পড়ে শহরবাসী। কিছুক্ষন পর পশু হাসপাতাল সংলগ্ন মাঠে দুইটি হেলিকাপ্টারে নামানো হয় ছত্রীসেনা। তাদের প্রথম আক্রমণের শিকার হয় মাতব্বর বাড়ির নিরিহ মানুষ। সেখানে ক্রমাগত গুলি চালিয়ে তারা হত্যা করে নারী ও শিশুসহ ১৯ জনকে। এরপর বিটাইপ এলাকায় ৬ জন আনসার প্রতিরোধ করতে চাইলে তাদের ও একজন তথ্য অফিসারকে গুলিকরে হত্যা করা হয়। এমনিভাবে নির্বিচারে গনহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞে প্রায় সহস্রাধিক নিরিহ মানুষ ঐদিন প্রাণ হারায় পাকসেনাদের হাতে। পরবর্তীতে শহরের পুরানবাজার এলকায় লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করা হলে আতঙ্কিতরা লোহালিয়া নদী সাঁতরে পার হয়ে প্রাণে বাঁচে। কিন্তু শহর পরিনত হয় ধ্বংসস্তুপে। টানা তিন দিন তিন রাত ধরে জ্বলে এ আগুন। 

এদিকে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে চোরাগুপ্তা আক্রমণ চালাতে শুরু করে। তেলিখালী ইটবাড়িয়াসহ বেশকিছু স্থানে খন্ড যুদ্ধে তারা খান সেনাদের প্রতিহত করে। পটুয়াখালীতে সবচেয়ে বড় সম্মুখ যুদ্ধ হয় গলাচিপা উপজেলার পানপট্টিতে। ১৮ নভেম্বর পাকহানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে  নিহত হয় ৭জন পাক সেনা আহত হয় আরও বেশ কয়েকজন। এ যুদ্ধে কমান্ডার হিসেবে নেতৃত্ব বর্তমান সিইসি কেএম নুরুল হুদা, ডেপুটি কমান্ডার ছিলেন হাবিবুর রহমান শওকত। সেখানে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা খোকন হালদার। মুক্তি যোদ্ধাদের গেবিলা আক্রমনের সামনে টিকতে না পেরে পরিস্থিতি বুঝে সেখান থেকে পালিয়ে যায় পাকসেনারা।

এ বিজয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন খন্ড যুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে শুরু করে মুিক্ত বাহিনী। ৭ ডিসেম্বর তারা হানাদারদের কোনঠাসা করে ফেলে। ঐ রাতেই একটি লঞ্চে করে পটুয়াখালী থেকে পালিয়ে যায় পাক সেনার দল। ৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয় পটুয়াখালী। মুক্তিযোদ্ধারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে।

তবে বিজয়ের ৪৭ বছরে এসে যুদ্ধকালিন সময়ে বিভিন্ন স্থানে শহীদদের  গনকবর ও স্মৃতি বিজরিত স্থানগুলো অরক্ষিত থাকা এবং মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বিভ্রান্তি থাকায় ক্ষেভ প্রকাশ করেছেন তারা। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা, মুক্তির এ দিনটিকে বিশেষ ভাবে পালন করাসহ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা নিয়ে বিতর্কের অবসান ঘটাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা।

পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যন মুক্তিযোদ্ধা খলিলুর রহমান মোহন জানান, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বিগত দিনেও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত স্থানগুলো সনাক্ত করে সংস্কার করেছে। চলতি অর্থবছরে এগুলো সংরক্ষনে প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মামুনুর রশিদ জানান প্রতি বছরেই বিশেষ দিবস সমুহে এসব স্মৃতি চিহ্নগুলো পরিদর্শন করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। গণকবর ও স্তম্ভগুলো সংরক্ষন ও সংস্কারে শিঘ্রই উদ্দোগ নেবে জেলা প্রশাসন।

Bootstrap Image Preview