আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস আজ । ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্বব্যাপী ১৮ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে প্রতিবছর এই দিনে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সব দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
‘অভিবাসীর অধিকার-মর্যাদা ও ন্যায়বিচার’ এই প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশেও নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে। ১৯৯৭ সাল থেকে ফিলিপাইন এবং অন্যান্য এশীয় অভিবাসী সংগঠনগুলো দিবসটি পালন করতে শুরু করে। শুরুর দিকে আদিবাসীদের নিয়ে তারা দিবসটিকে ‘আন্তর্জাতিক ঐক্য দিবস’ হিসেবে পালন করতো।
১৯৯০ সালে অভিবাসী শ্রমিক ও দেশে ফেলে আসা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন করেছিল জাতিসংঘ। এরই প্রেক্ষাপটে ১৮ ডিসেম্বরকে লক্ষ্য করে মাইগ্রেন্ট রাইটস্ ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন মাইগ্রেন্টস রাইটস্- সহ বিশ্বের অনেক সংগঠন অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বৈশ্বিকভাবে প্রচারণা চালায়। অবশেষে ১৯৯৯ সালের শেষের দিকে অনলাইনে ব্যাপক প্রচারণার ফলে, ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অভিবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং তাদের পরিবারের ন্যায্য অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক চু্ক্তি-৪৫/১৫৮ প্রস্তাব আকারে গ্রহণ করে এবং ১৮ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এক বাণীতে শোষণ-বঞ্চনা ও হয়রানি মুক্ত অভিবাসন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অভিবাসী শ্রমিকরা যেন কোনোরূপ শোষণ, বঞ্চনা ও হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতেও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এই আহ্বান জানান। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো জাতীয়ভাবে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস-২০১৮ উদযাপিত হচ্ছে জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘অভিবাসনের ইতিহাসও মানব সভ্যতার মতো সুপ্রাচীন। প্রাচীনকাল থেকেই জীবিকার সন্ধান, আর্থ-সামাজিক, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে মানুষ পাড়ি জমাচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে। তাই মানব সভ্যতার বিকাশে অভিবাসনের গুরুত্ব অপরিসীম। গন্তব্য দেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন ছাড়াও নিজ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভিবাসীদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে ।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে পৃথিবীকে আরও বৈচিত্র্যময় ও বাসযোগ্য করে তোলার ক্ষেত্রেও অভিবাসী জনগোষ্ঠীর ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অভিবাসনকে অন্তর্ভুক্ত করার মধ্য দিয়ে সভ্যতার অগ্রগতিতে অভিবাসনের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।’
দিবসটি জাতীয়ভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দিনব্যাপী মেলাসহ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।
অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম পর্বে রয়েছে- অভিবাসী দিবস সম্পর্কে আলোচনা সভা, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রবাসী কর্মীদের সন্তানদের শিক্ষাবৃত্তির চেক প্রদান, ক্রেস্ট প্রদান, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মেলা উদ্বোধন ও স্টল পরিদর্শন।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে- ‘সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব’ শীর্ষক বিতর্ক প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং অভিবাসী মেলায় নির্বাচিত সেরা স্টলের পুরস্কার বিতরণ করা। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।