Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ বুধবার, এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

নির্বাচনী প্রচারণায় পরিবেশ দূষণ

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:০৮ PM
আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ০৯:২১ PM

bdmorning Image Preview
ছবি: সংগৃহীত


টেকনাফে থেকে তেতুলিয়া, নির্বাচনের আমেজ সর্বত্র। প্রতি মুহুর্তেই বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। রাজনীবিদ, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সবার গায়ে নির্বাচনী হাওয়া দোল খাচ্ছে। প্রায় ১ হাজার ৮৪১ জন প্রার্থী তাদের প্রচারণায় পাল্লা দিয়ে ব্যবহার করে যাচ্ছে পোষ্টার ও মাইক। এরই সঙ্গে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ।

মোট ভোটার সংখ্যা ১০ কোটি ৪১ লাখ। গত ১০ বছরে ভোটারের সংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ৩১ লাখ। প্রতিটি আসনের প্রার্থীয় চায় তার সর্বোচ্চ প্রচার। এজন্য পোষ্টারে প্রচারণায় ঝোঁক সবচেয়ে বেশি। এর পরই মাইক কিংবা সাউন্ড সিস্টেম এর উপর। এসব কার্যক্রম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবেশ দূষণ করে থাকে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও চোখে পড়ার মতো প্রচারণা চলছে এবারের নির্বাচনে।

বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির ঢাকা অঞ্চলে ৩০০-র বেশি সদস্য বা ছাপাখানা রয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০০৮) এসব ছাপাখানা থেকে প্রায় ৩ কোটির বেশি পোস্টার ছাপানো হয়েছিল, যার আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় ১০ কোটি টাকা। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০৫ কোটি টাকার পোষ্টার ছাপা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছে।

আমেরিকান এনসি স্টেট ইউনিভার্সিটির হর্টিকালচার সায়েন্স ডিপার্টমেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি গাছ বছরে প্রায় ২২ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশকে নির্মল করে। যত বেশি কাগজের ব্যবহার, তত বেশি গাছের মৃত্যু। আমাদেরে গত নির্বাচনে ৩ কোটি পোস্টারের কাগজ তৈরি করা হয়েছিলো যা একটি হিসাব করে দেখেছে, ২৩/১৮ ইঞ্চি আকারের ৮০ জিএসএমের ৩ কোটি পোস্টারের কাগজ তৈরির জন্য ৮০৩০টি গাছ প্রয়োজন। এতে পরিবেশের প্রতক্ষ প্রভাব পড়ছে।

বৃষ্টি বা আর্দ্রতার প্রভাব থেকে পোস্টার রক্ষা করতে পোস্টারের ওপর পলি (প্লাস্টিক) লেমিনেশন করা হয়। কাগজ পচনশীল হলেও পলি (প্লাস্টিক) পচনশীল নয়। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ অপর একটি হিসাব করে দেখে যে, ২৩/১৮ ইঞ্চি আকারের প্রতিটি পোস্টার লেমিনেশন করতে ৯ গ্রাম পলিথিন ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া প্রার্থীরা তাদের পোস্টার ঝুলাতে গাছের গায়ে অসংখ্য পেরেক বা তারকাঁটা দিয়ে দড়ি সংযোজন করছেন, আবার দীর্ঘস্থায়ী করে পোস্টার ঝুলাতে পাটের দড়ির পরিবর্তে জিআই তারও ব্যবহার করছেন। গাছের দেহে এসব বাহ্যিক জিনিসের উপস্থিতির কারণে গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হ্রাস পায়। তবে নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে পোস্টার অপসারণের জন্য নির্বাচন বিধিমালায় কোনো নির্দেশনা নেই এবং পরবর্তী সময়ে এ পোস্টারগুলো রাস্তায় ছিঁড়ে পড়ে থাকে এবং নালা-নর্দমা আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।

এসব নিয়ে পথচারী আব্দুর রহমান বলেন, নির্বাচন আসলেই প্রতিবার ব্যাপক পোষ্টার লাগানো হয়। এসব পোষ্টার যখন ছিড়ে পরে যায় তখন রাস্তা নোংড়া হয়ে যায়। অন্যদিকে লেমিনেটিং করা পোষ্টারগুলো ড্রেনে গিয়ে জমে তা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এসব নামমাত্র পরিষ্কার করলেও এলাকা নোংরা হয়েই থাকে।

এছাড়া নির্বাচনীর প্রচারের আরেকটি মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় তা হলো মিছিল বা শোডাউন। এরই সঙ্গে অতি উৎসাহী সমর্থকের বাইকের হর্নের আওয়াজ শব্দদূষণের মাত্রা আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা গত নভেম্বর মাসে মিছিলের সময় ধানমন্ডির বিভিন্ন পয়েন্টে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করে। এতে দেখা যায়, মিছিলে সর্বনিন্ম শব্দের মাত্রা ছিল ১০০ ডেসিবল এবং সর্বোচ্চ ১১০ ডেসিবল।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুসারে নির্ধারিত শব্দের মানমাত্রা নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার জন্য দিবাকালীন যথাক্রমে ৫০, ৫৫, ৬০, ৭০ ও ৭৫ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন যথাক্রমে ৪০, ৪৫, ৫০, ৬০ ও ৭০ ডেসিবল।

ইতিমধ্যে বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি-২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ঢাকা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের The Global Liveability Index-2018 প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমগ্র বিশ্বে বসবাস অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকা শহরের অবস্থান দ্বিতীয়।

বিশ্যবিদ্যালয় পড়ুয়া তামিম আইমান বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই বিভিন্ন র‌্যালি, মাইকিং প্রতিনিয়তই চলছে, যা আমাদের বিরক্তির কারণ। দিনভর এমন উচ্চ শব্দের কারণে অমাদের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া র‌্যালির কারণে অনেক জ্যাম ও শব্দ সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, নির্বাচিত হলে কী করা হবে, তা বলার আগে নির্বাচনী প্রচারকালে পরিবেশকে কতটুকু সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে; তা বিবেচনায় নেয়া। প্রচারণা কাজে কাগজ ও প্লাস্টিক, মাইক ইত্যাদি ব্যবহার কমিয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে প্রচার করা যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা।

বিষয়টি নিয়ে বিডিমর্নিংয়ের সাথে কথা হয় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সাথে। তিনি বলেন, এসব পোষ্টারে প্রচুর কালি ব্যবহার করা হয়, এর এ কালিতে প্রচুর শিসা থাকে। এছাড়া লেমিনেটিং করে দেওয়া হয় যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি মাইকসহ বিভিন্নভাবে শব্দ দূষণও হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের তেমন আগ্রহ নেই। আমরা নির্বাচন কমিশনের সাথে কথা বলেছি। তারা এ্ট নির্বাচনে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। তবে এর পর যত নির্বাচন হবে তার জন্য নির্দিষ্ট একটা নিতীমালা করা হবে।

Bootstrap Image Preview