সম্প্রতি তুরস্কের মিডিয়ায় একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, দুহাতে দুটো বড় কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনসাল জেনারেলের বাড়িতে ঢুকছেন একটি লোক। তুরস্কের সংবাদমাধ্যমের দাবি, ওই ব্যাগের মধ্যেই ছিল নিহত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগির দেহাবশেষ।
গত ২ অক্টোবর বিবাহবিচ্ছেদের কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনসুলেটে গিয়েছিলেন খাশোগি। এর পরে আর দীর্ঘদিন খোঁজ মেলেনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ওরফে এমবিএস-এর এই সমালোচকের।
পরে তদন্তে জানা যায়, সৌদি আরব থেকে পাঠানো একটি বিশেষ দল কনসুলেটেই খুন করেছিল তাকে। শ্বাসরোধ করে মেরে দেহটাকে টুকরো টুকরো করে কেটে রাসায়নিকে মিশিয়ে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়।
খাশোগি-হত্যার শেষ মুহূর্তের একটি অডিও টেপও প্রকাশ্যে এসেছে সম্প্রতি। তাতে খাশোগির আর্তনাদ থেকে করাতে তার দেহ কাটার আওয়াজ, শোনা গেছে সবই। কিন্তু তারপরে কী হয়েছিল, জানা যায়নি। সেই অংশটিই ধরা পড়েছে নতুন এই ভিডিওই।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, সৌদি ‘হিট টিম’-এর কিছু লোক সৌদি কনসাল জেনারেলের বাড়ির সামনে একটি ভ্যান থেকে নামলেন। সেখান থেকে বেশ কয়েকশো মিটার দূরে সৌদি কনসুলেট। দুহাতে দুটো কালো ব্যাগ নিয়ে কনসাল জেনারেলের বাড়িতে ঢুকলেন একজন। তুরস্কের সংবাদমাধ্যমে দাবি, ওই ব্যাগ দুটিতে খাশোগির দেহাবশেষ ছিল।
তুরস্ক বারবারই দাবি করেছে, খাশোগিকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। এই খুনের পেছনে রয়েছেন সৌদির বড় মাথারা। এমনকি এমবিএসও। খাশোগির দেশ অবশ্য তা অস্বীকার করে এসেছে।
গত মাসে এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সৌদি প্রশাসন পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় অবশ্য প্রকাশ্যে আনা হয়নি। অন্য ১১ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শুনানি চলছে।
নতুন ভিডিওটি তুরস্কের একটি টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়েছে। খবর হয়েছে তুরস্কের একটি দৈনিকেও। তুরস্কের গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে ঘনিষ্ট যোগ রয়েছে ওই সংবাদপত্রের। খাশোগি হত্যা-সংক্রান্ত একাধিক বোমা ফাটিয়েছে তারা।
তুরস্কের ওই দৈনিকের সাংবাদিক ফেরহাত উনলু একটি বইও লিখেছেন, ‘ডিপ্লোমেটিক অ্যাট্রোসিটি : দ্য ডার্ক সিক্রেটস অব খাশোগি মার্ডার’। উনলু জানিয়েছেন, কনসাল জেনারেলের বাড়িতে একটি কুয়ো রয়েছে। গোটা বাড়ি তল্লাশি করা হলেও ওই কুয়োটি ভালো করে পরীক্ষা করতে দেয়া হয়নি তদন্তকারীদের। যে কালো প্যাকেট নিয়ে কনসাল জেনারেলের বাড়িতে ঢুকেছিল হিট-টিম, তা নিয়ে বেরিয়ে আসার কোনো প্রমাণ নেই।
আরও এক ধাপ এগিয়ে এ বিষয়ে একটি প্রথম সারির মার্কিন দৈনিকের ব্যাখ্যা: ‘এবার সরাসরি প্রমাণ মিলল। কনসুলেটে থেকে একটি ভ্যান কনসাল জেনারেলের বাড়ি গিয়েছিল। হিট-টিমের একটি লোক ভ্যান থেকে কালো রঙের ব্যাগ নামায়। এতে বোঝাই যাচ্ছে, খাশোগির দেহাবশেষ কনসাল জেনারেলের বাড়িতে আনা হয়েছিল। এতদিন এই প্রশ্নটাই ঘুরপাক খাচ্ছিল, খাশোগির দেহ কোথায় গেল? তদন্তে এবার এই দিকটাই জোর দেয়া উচিত যে, কনসাল জেনারেলের বাড়িতে আসলে কী হয়েছিল।’