একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বলার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় নাইকো দুর্নীতি মামলার শুনানিতে এসে আদালতের স্থান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে নাইকো দুর্নীতির মামলার শুনানি শেষে আদালত থেকে বের করার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
বিচারকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এত ছোট জায়গায় মামলা চলতে পারে না। এখানে আমাদের কোনো আইনজীবী বসতে পারেন না। এখানে মামলা চললে আমি আর আদালতে আসব না। এখানে আইনজীবীদের গেট থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। আপনারা সাজা দিলে দিয়ে দেন, তাও আমি এ আদালতে আসব না।’
আদালত থেকে বের হওয়ার সময় নির্বাচন নিয়ে কিছু বলবেন কি না-সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে বলার কিছু নেই।’
এদিকে, নাইকো দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জগঠনের শুনানির পরবর্তী দিন আগামী ১৩ জানুয়ারি ধার্য করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার আংশিক শুনানির পরে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ শেখ হাফিজুর রহমান এই দিন ধার্য করেন।
এর আগে ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে এই শুনানি কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে এ মামলায় গত ৮ ও ৯ নভেম্বর ওই আদালতে খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে অন্যান্য আসামিদের পক্ষে আংশিক চার্জগঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর ৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। এরপর গত ২২ নভেম্বর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এফবিআই ও কানাডা পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট এবং তাদের সাক্ষ্য গ্রহণের আবেদন করেন। ওইদিন আদালত ৯ ডিসেম্বর শুনানির দিন ধার্য করেন। পরে ৯ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার পক্ষে আপত্তি দাখিলের জন্য সময় চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে ৩ জানুয়ারি ধার্য তারিখ আপত্তি দাখিল ও শুনানির দিন ধার্য করেন।
মামলায় বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একে এম মোশাররফ হোসেন ও সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া (সিলভার সেলিম), জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, তখনকার প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হকও আসামি।
২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাটির তদন্তের পর ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
চার্জশিটের বৈধতা চ্যলেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে ২০০৮ সালের ৯ জুলাই হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন। ২০১৫ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট রুল ডিসচার্জ করে স্থাগিতাদেশ প্রত্যাহার করেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত দেখিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর হাতে ‘তুলে দেওয়ার’ অভিযোগে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার ক্ষতির দায়ে এই মামলাটি করা হয়।
নাইকো দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেন, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সিএম ইউসুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ডিত হয়ে গত কয়েকমাস ধরে কারাগারে খালেদা জিয়া।সাজার কারণে একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া।