Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ৩০ বুধবার, এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

বাইক্কা বিলে কমে যাচ্ছে অতিথি পাখির সংখ্যা

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫৭ PM
আপডেট: ০৩ জানুয়ারী ২০১৯, ০৯:৫৭ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


হৃদয় দেবনাথঃ

প্রতিবছরই অতিথি পাখির অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল। পাখিগুলো পর্যটকদেরও বেশ আকৃষ্ট করে। শীতে প্রায় প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে এই বাইক্কাবিল পাখি ও মৎস অভয়াশ্রমে। তবে পাখি শিকারির শ্যেন দৃষ্টিতে এসব প্রকৃতির অতিথির সংখ্যা কমেও যাচ্ছে বছর বছর।

সাত সাগর তের নদী পেরিয়ে শীতের আগমনী বার্তায় বেড়াতে আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখি। মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন জলাশয়, খাল, নদী এসব অতিথি পাখি আশ্রয় নিয়েছে। নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলিতে মুখরিত বাইক্কাবিলসহ জেলার হাওর অঞ্চল। তবে শিকারিদের শ্যেন দৃষ্টি আর পরিবেশ দূষণের কারণে ধীরে ধীরে অতিথি পাখির এ জনপদে আগমন কমে আসছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

দিন দিন এখন এ অঞ্চলে কমে আসছে অতিথি পাখির আগমন। শিকারিদের শ্যেন দৃষ্টি আর মাছের প্রকল্পে কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসা পাখির বিচরণ কমতে শুরু করেছে বলে ধারণা করছেন এলাকার লোকজন।

শীতের শুরুতে এরা এখানে আসতে শুরু করে। বর্তমানে পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত পুরো এলাকা। দেশি-বিদেশী পর্যটকরাও মন ভরে উপভোগ করছেন পাখির উড়া-উড়ি, কালকাকলি আর কিচিরমিচির ডাক। অনেকে পাখির অবাধ বিচরণ আর ডানা মেলে উড়ে বেড়ানো কিংবা দলবেধে পানিতে ভেসে চলার ছবি ধারণ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

নৌকায় বাইক্কাবিল ঘুরে দেখা মেলে অসংখ্য পরিযায়ী পাখির দল কিচির মিচির শব্দে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য। ক্যামেরায় ক্লিক পড়তেই ঝাঁক বেঁধে কিচিরমিচির শব্দে উড়তে শুরু করে আকাশে। লেকের চারদিক তাকাতেই নানা প্রজাতির ছোট-বড় অসংখ্য পাখির দেখা মেলে।

বাইক্কা বিলে ঘুরতে আসা পর্যটক ও পাখিপ্রেমি তারিক হাসান এ প্রতিনিধিকে বলেন, বরাবরের মতো আমি পাখিপ্রিয় মানুষ। একসময় বাসায় পাখি লালন-পালন করতাম। সম্প্রতি এসব পাখি মুক্ত করে দিয়েছি। শীতের সকালে প্রায় দিনেই সময় পেলে ভোরবেলা পাখি দেখব বলে বাইক্কা বিলে চলে আসি।

তবে অন্যান্যবারের মতো এ বছর এমন ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির দেখা মেলেনি বলে জানান তিনি। তবে সংখ্যায় কম হলেও এবার সত্যিই এদের দলবেধে আকাশে উড়ে বেড়ানো আর কলকাকলি দেখে ভালো লাগছে বলে জানান তিনি।

বাইক্কা বিলে নৌকা নিয়ে মাছ শিকার করা রুবেল মিয়া নামে একজন মৎসজীবি জানান, মাঝে মাঝে বন্দুক নিয়ে অনেকে পাখি শিকারে আসেন এখানে। ইদানীং শিকারিরা খুব একটা আসে না। এদিকে একসময় শীত এলেই মৌলভীবাজার জেলার বাইক্কা বিলসহ বিভিন্ন হাওর এলাকার খাল-বিল আর জলাশয় নানা রং আর আকৃতির অতিথি পাখির কুঞ্জনে মুখরিত হত। এখন কমতে শুরু করেছে প্রকৃতির পরিযায়ীদের আগমন।

এ কসময় বালি হাঁস, পানকৌড়ি, ডাহুক, কানা বক, লেন্জা, সরালি, মাছরাঙা, গাঙচিলসহ অসংখ্য পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটত এখানে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বর্তমানে গাঙচিল আর লেন্জা প্রকৃতির পাখি ছাড়া আর কোনো প্রজাতির পাখি এখানে চোখে পড়ে না। তারা এ জন্য শিকারিদের শ্যেন দৃষ্টি আর মাছের প্রকল্পে পাখির জন্য ক্ষতিকারক কীটনাশক (বিষ) ব্যবহারকে দায়ী করেন।

পাখিপ্রেমী খোকন তঞ্জুমান জানান, একসময় শীতের শুরুতেই দলে দলে অতিথি পাখির আগমন ঘটত বাইক্কা বিল এলাকায়। এদের কলকাকলিতে মুখর থাকতো পুরো বাইক্কা বিল। সকাল কিংবা বিকেল পাখির কিচিরমিচির শব্দে সমস্ত হাওর অঞ্চল মুখরিত হয়ে ওঠতো। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য কমে এসেছে।

তিনি অভিযোগ করেন, পাখি শিকারিরা এসব স্থান থেকে বিভিন্ন কায়দা ব্যবহার করে পাখি ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করছে। তাই এসব অতিথি পাখিরা আর বাইক্কা বিলকে নিরাপদ ভাবছে না। তাই প্রতিনিয়তই কমছে অতিথি পাখির সংখ্যা তিনি বলেন, দ্রুতই এসব অসাধু অতিথি পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে একসময় পাখি শূন্য হয়ে পড়বে এই বাইক্কা বিল।

জানা গেছে, সাধারণত শীতপ্রধান দেশ সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ আরো অনেক দেশ থেকে এখানে আসে এসব অতিথি পাখি। এদের মধ্যে রয়েছে বালি হাঁস, পানকৌড়ি, ডাহুক, কানা বক, লেন্জা, সরালি, মাছরাঙা, গাংচিল অন্যতম। শীতকালে বাংলার আলো বাতাসের সঙ্গে এই পাখিগুলোর রয়েছে এক ধরনের আত্মিক সম্পর্ক। যে কারণে এরা বাংলাদেশের প্রকৃতিকে নিরাপদ ভেবে শীত মৌসুমে এসে ভিড় জমায়।

পাখি শিকারিদের সম্পর্কে হুঁশিয়ারি দিয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, শিগ্রই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। অতিথি পাখি বিক্রি অবস্থায় কোনো স্থানে কাউকে পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Bootstrap Image Preview