স্থায়ীভাবে দেশে ফিরছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফের একমাত্র মেয়ে সৈয়দা রীমা ইসলাম। লন্ডনে ব্যাংকের চাকরি ছাড়ার আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন। বাপ-দাদার শিকড় বাংলাদেশেই বাস করার চিন্তা করছেন তিনি।
এ দিকে সৈয়দা রীমা ইসলামের বেশকিছু ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ওই ছবিগুলোতে দেখা গেছে, পিতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কফিনের পাশে বিমর্ষ বদনে দাঁড়িয়ে আছেন মেয়ে রীমা। রীমা ইসলাম ও অন্যান্যরা গাড়ি থেকে পিতার কফিনটি নামাচ্ছেন। তিনি অশ্রু ভারাক্রান্ত নয়নে তাকিয়ে আছেন।
আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের শূন্য আসনে (কিশোরগঞ্জ-১) তাঁর একমাত্র সন্তান সৈয়দা রীমা ইসলামকে প্রার্থী করার দাবিতে সরব কিশোরগঞ্জবাসী।
তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ গত কয়দিন ধরেই রীমাকে প্রার্থী করার দাবি জানাচ্ছেন। কিশোরগঞ্জের মানুষ রীমা ইসলামকে সৈয়দ আশরাফের যোগ্য উত্তরসূরি বলে মনে করছে।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার শোলাকিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা ফাইজুল হক গোলাপ বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের উচ্চশিক্ষিত কন্যা সবদিক থেকেই যোগ্য। তাকে প্রার্থী করা হলে কারও কোনো প্রশ্ন থাকবে না।
হোসেনপুর উপজেলার পুমদি ইউনিয়নের গৃদান গ্রামের আওয়ামী লীগ কর্মী নজরুল ইসলাম খায়রুল বলেন, রীমা ইসলামের মাঝেই সৈয়দ আশরাফের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। তাকে প্রার্থী করা হলেই সৈয়দ আশরাফের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো হবে।
কিশোরগঞ্জের প্রবীণ সাংবাদিক সুবীর বসাক বলেন, সততা ও আদর্শের মাপকাঠিতে রীমা ইসলামই পিতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবেন।
সংবাদকর্মী আনোয়ারুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, রীমার প্রতি সাধারণ মানুষের আবেগ-অনুভূতি কাজ করছে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শরীফ সাদী বলেন, বিষয়টা নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। আমরা তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছি।
তবে রাজনীতিতে আসার বিষয়ে, রীমার পরিবারের সদস্যরা বলছেন, এখনই এমন কিছু চিন্তা করেননি তারা। মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনায় রেখে পরিবারে এ নিয়ে তেমন কোনো আলাপও হয়নি।
সৈয়দা রীমা ইসলাম লন্ডনের একটি বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত। বর্তমানে তিনি লন্ডনে এইচএসবিসি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে উচ্চপদে কর্মরত।
প্রসঙ্গত, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বাংলাদেশের মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। আশরাফুল ইসলাম ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন।
বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। যখন আব্দুল জলিল গ্রেফতার হন, তখন সৈয়দ আশরাফুল আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং পরবর্তীতে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সঙ্গে আশরাফুলের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর সৈয়দ আশরাফুল যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং লন্ডনের হ্যামলেট টাওয়ারে বসবাস শুরু করেন।
১৯৯৬ সালে আশরাফুল দেশে ফিরে আসেন এবং জুন ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০০১ সালে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত তিনি পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
২০১৫ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেন। এক মাস এক সপ্তাহ দফতরবিহীন মন্ত্রী থাকার পর ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।
ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফুল ব্রিটিশ ভারতীয় শীলা ঠাকুরের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে (রীমা ঠাকুর), যে লন্ডনের এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন শেখ হাসিনার দুঃসময়ের সহযাত্রী, একজন নির্ভরযোগ্য ও আস্থাভাজন মানুষ।