Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৫ সোমবার, মে ২০২৫ | ২২ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাবি'র গাছ কর্তনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ 

শাহাবুদ্দীন ইসলাম, রাবি প্রতিনিধিঃ
প্রকাশিত: ১২ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:১৫ PM
আপডেট: ১২ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:১৫ PM

bdmorning Image Preview


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কাজলা ফটকের পূর্ব দিকে জুবেরী মাঠের গাছ কর্তনের ফলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি জুবেরী মাঠের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে শেখ রাসেল মডেল স্কুলের নতুন চারতলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তে এ গাছগুলো কর্তন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, প্রস্তাবিত স্থানে বহুতল বিশিষ্ট স্কুল নির্মাণ করা হলে একদিকে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের সৌন্দর্যহানি হবে তেমনি স্কুল-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।

শিক্ষকদের বক্তব্য, মহাসড়কের একেবারে সন্নিকটে হওয়ায় স্থানটি স্কুল নির্মাণের জন্য উপযুক্ত নয়। সবসময় যানবাহনের শব্দ থাকে ফলে শিশুদের শিক্ষাদানে মনোযোগের সমস্যা হবে। ভবনের পাশেই কাজলা গেট ও রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়ক থাকায় শিশু-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। এছাড়া ক্যাম্পাসে উন্মুক্ত স্থান ও খেলাধুলার জায়গা কমে আসবে। এতে করে ঐতিহ্যবাহী জুবেরী ভবনের সৌন্দর্যহানি ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এ নিয়ে ফেসবুকে অনেক পোস্টও দিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, স্কুলের জন্য নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় জুবেরী মাঠের পাশে নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ইনস্টিটিউটের পরিচালকসহ ২০-২২ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির এক সভায় স্কুলের নতুন ভবনের জন্য জুবেরী মাঠের পাশের জায়গাটিকে নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় ভবনের জন্য শেখ রাসেল স্কুলের পশ্চিম পাশে ও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের দক্ষিণ পাশের জায়গা দুইটির কথাও প্রস্তাব করা হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত জুবেরী মাঠের পাশের জায়গাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা যায়, চারতলা স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা নকশা প্রণয়ন ও সেই অনুসারে নির্মাণব্যয় নির্ধারণ করবে। এরপর দরপত্র আহ্বান করা হলে প্রকৌশল দফতরের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

স্কুল ভবনের জন্য নির্ধারিত জায়গাটিতে সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে থাকা প্রায় সবগুলো ইউক্যালিপ্টাস গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। মাঠের ওই অংশে বেশিরভাগ গাছই ইউক্যালিপ্টাস। সেখানে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের একটি সাইনবোর্ডও রয়েছে।

বর্তমানে শেখ রাসেল মডেল স্কুলের মূল ভবনটি মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের পশ্চিম-উত্তর দিকে অবস্থিত। স্কুলটি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডেমনস্ট্রেশন ইউনিট হিসেবে পরিচালিত হয়।

তবে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবুল হাসান চৌধুরী জানান, তিনি স্কুল ভবন নির্মাণের ব্যাপারেও তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এখনও পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে, তার নিয়োগ প্রাপ্তির আগেই হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্যের ব্যাপারটি ভেবে দেখা উচিত। এটা নিয়ে একগুঁয়েমী করার কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে বেশ বড়সড় জায়গা আছে। সেখানে বড় ভবন করে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ও শেখ রাসেল স্কুল দুইটাই করা সম্ভব। আমি উপ-উপাচার্যের দায়িত্ব পালনকালেও ওই জায়গাটির কথা প্রস্তাব করেছিলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আমজাদ হোসেন বলেন, মাসখানেক আগে আমরা কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। সেখানে তাঁকে ওই জায়গায় ভবন না করার কথা বলেছিলাম। তবে তিনি কোনোমতেই সিদ্ধান্ত থেকে সরতে রাজি হননি।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া বলেন, যারা এসব কথা বলছেন, তারা কেউ মূল বিষয়টি খতিয়ে না দেখেই বলছেন। ভবনটি হবে জুবেরী মাঠের পাশে সীমানা-প্রাচীর ঘেঁষে। সেখানে পূর্ব-পশ্চিমে লম্বায় ৩০০-৩৫০ ফুট ও প্রস্থে ৭০ ফুটের মতো জায়গা লাগবে। ওই জায়গায় তো আগে ক্ষতিকর ইউক্যালিপ্টাস গাছ লাগানো ছিল। তখন তো মাঠের ক্ষতি হয়নি।

তিনি বলেন, প্রায় ২০-২২ জন শিক্ষক মিলে ওই স্থানটি নির্ধারণ করেছেন। তাদের সিদ্ধান্ত তো এতটা খারাপ হওয়ার কথা নয়। ওখানে স্কুল ভবন হলে জুবেরী মাঠে শিক্ষার্থীরাই খেলাধুলা, ছুটাছুটি করবে। 

 

Bootstrap Image Preview