দেশজুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে তফসিল আর মার্চের শুরু থেকে পাঁচ ধাপে হবে এই নির্বাচন।
সদর উপজেলার সব কেন্দ্রে এবার ভোট গ্রহন হবে ইভিএমে। এবার প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রতীকে হবে উপজেলা নির্বাচন। ফলে এবার ভোট নিয়ে ক্ষমতাসীন দলে আছে বাড়তি আগ্রহ। তবে জাতীয় নির্বাচনে হেরে যাওয়া বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহ লক্ষ করা যায়নি।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী নেতা ও স্থানীয় নব নির্বাচিত এমপিদের কাছাকাছি ভিড়তে শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিতরা চাচ্ছেন উপজেলায় প্রার্থী হতে। মনোনয়নের দৌড়ে থাকা নেতারা এরই মধ্যে এলাকায় ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে সবার কাছে দোয়া চাইছেন। পুরানো প্রার্থীদের সঙ্গে এবার চারদিকে নতুন মুখের ছড়াছড়ি।
প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের ৪-৬ জন করে সম্ভাব্য প্রার্থী সরব রয়েছেন। বিএনপির কোন প্রার্থী এখনও পর্যন্ত মাঠে নেই। বিএনপি নেতারা বলছেন, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা এলে বলা যাবে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আগামী মাসে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। উপজেলা নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচন আমরা দলীয়ভাবে করি, জোটগতভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আমরা কখনো করিনি। এমনকি সিটি করপোরেশন নির্বাচনও আমরা দলীয়ভাবে দলীয় প্রতীকেই করেছি। এবার আমাদের দলের সভাপতি আমাদের নেত্রী সিদ্ধান্ত দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচন দলীয়ভাবে নৌকা প্রতীকে হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সুত্রে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো অনুপ্রবেশকারীকে মনোনয়ন দেবে না ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্তত ১২ বছর আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলে তার মনোনয়ন লাভের সম্ভাবনা কম। এরই মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের কাজও শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল।
এদিকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার রাতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো অনিয়মের আশংকায় ধানের শীষ প্রতীকে আসন্ন উপজেলা নির্বাচন না করার পক্ষে মতামত দেন স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্য। তবে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চাইলে বিএনপি আপত্তি করবে না। পরে সিদ্ধান্ত হয়, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মতামত গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আজ ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে সারাদেশের প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশাসন আর আওয়ামী লীগ মিলে ভোট বাক্স ভর্তি করেছে। জনগন ভোট দিতে পারেনি। উপজেলা নির্বাচনেও সেই একই কায়দায় আরেকটি প্রহসন করতে চাচ্ছে তারা। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে কারচুপির পর বর্তমান নির্বাচন কমিশনার ও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে এখন কোনো নির্বাচনেই মানুষের আগ্রহ নেই।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে ধাপে ধাপে বিভাগ অনুযায়ী ভোট গ্রহণ করা হবে। যেহেতু ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি পরীক্ষা, এপ্রিল মাসে এইচএসসি পরীক্ষা ও সামনে পবিত্র রমজান- এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে প্রশাসনিক বিভাগ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা সব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি। তিনি বলেন, জেলা সদর উপজেলাগুলোয় ইভিএম ব্যবহারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। সদর উপজেলার সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে।