আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতিহার অনুযায়ী গ্রামকে শহরে রূপ দিতে কর্মপন্থা তৈরির কাজ শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে মন্ত্রীর দপ্তরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় পরিকল্পনা কমিশনের সব সদস্য ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, গতকালের বৈঠকে ‘গ্রামকে শহর করার’ বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। কিভাবে গ্রামেও শহরের সুবিধা দেওয়া যায়—এ বিষয়ে বৈঠকে বেশ কয়েকটি মতামত তুলে ধরেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা।
তাঁদের মতে, সারা দেশে গ্রামীণ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে গেছে বেশির ভাগ এলাকায়। ডিজিটাইজেশনও হয়েছে ব্যাপক হারে। এখন দরকার শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন কেউ কেউ। সে জন্য চিকিৎসকরা যাতে গ্রামে থাকেন, সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। স্কুলের পাশে শিক্ষকদের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসকদের থাকার অবকাঠামো করতে হবে। এ ছাড়া গ্রামে যারা ঘর করতে চাইবে, তাদেরকে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
সবার বক্তব্য শুনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আরো মতামত নিয়ে তিনি আগামী সপ্তাহে আবারও বৈঠক করবেন। সেখানে সবাইকে মতামত তুলে ধরার কথা বলেছেন তিনি।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এনায়েত হোসেন বলেন, ‘গ্রামকে কিভাবে শহরে রূপ দেওয়া যায়, তার একটি গাইডলাইন তৈরির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এ বিষয়ে কাজ করতে পারে। কমিশন একটি খসড়া কর্মপন্থা তৈরি করবে। পরে তা নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা হবে।’
নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশের প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক নগর সুবিধা দিয়ে ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ হিসেবে গড়ে তুলবে আওয়ামী লীগ। যেখানে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হবে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতিহারে গ্রামকে শহরে রূপ দেওয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছিল। ইশতিহারে বলা হয়েছিল, প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সমৃদ্ধ শহর হিসেবে গড়ে তোলা হবে। ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর সে অঙ্গীকার বাস্তবায়নে কর্মপন্থা তৈরির কাজ শুরু করেছে। আর এ কর্মপন্থা তৈরি করবে পরিকল্পনা কমিশন।
এ ব্যাপারে কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামকে শহর করে তোলা হবে মানে এই নয় যে গ্রামের মধ্যে বহুতল ভবন করা হবে। আসলে এটি হবে শহরের বাসিন্দারা যেসব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে, গ্রামের মানুষও যাতে সেসব সুযোগ-সুবিধা পায় তার নিশ্চয়তা দেওয়া। কিন্তু কোনো কোনো মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিষয়টি না বুঝেই অতি উৎসাহী হয়ে বহুতল ভবন নির্মাণসংক্রান্ত প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া শুরু করেছে।