Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৫ সোমবার, আগষ্ট ২০২৫ | ৯ ভাদ্র ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

থাই কারাগারে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন শরণার্থী আরব ফুটবলার আরাবি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৩৮ PM
আপডেট: ২৫ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:৪১ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


থাইল্যান্ডের কারাগারে আটক শরণার্থী ফুটবলার হাকিম আল আরাবি বলেছেন, তাকে যদি নিজ দেশ বাহরাইনে ফেরত পাঠানো হয়, তবে সেখানে তিনি নির্যাতনের শিকার হবেন। এমনকি তাকে হত্যা করেও ফেলতে পারে।

ব্যাংককের রেম্যান্ড কারাগার থেকে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, তিনি খুবই আতঙ্কিত। তার অবস্থা ক্রমে খারাপের দিকে যাচ্ছে।

বাহরাইন থেকে পালিয়ে আসার পর ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় পান আল আরাবি। রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নিজ দেশে তিনি নিপীড়ন, আটক ও বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন। বাহরাইনে তার বিরুদ্ধে ভাঙচুরের অভিযোগে মামলা রয়েছে।

আল আরাবি বলেন, বাহরাইনে আমি কিছু করিনি, থাইল্যান্ডেও না- এমনকি অস্ট্রেলিয়ায়ও আমার বিরুদ্ধে কোনো খারাপ রেকর্ড নেই। কাজেই আমাকে এভাবে কেন আটক রাখা হয়েছে?

‘বাহরাইনে আমার মতো মানুষের জন্য কোনো মানবাধিকার কিংবা নিরাপত্তা নেই,’ বললেন এ ফুটবলার।

গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে স্ত্রীকে নিয়ে থাইল্যান্ডে মধুচন্দ্রিমায় যান ২৫ বছর বয়সী আল আরাবি। এর আগে পাঁচ বছর ধরে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করে আসছিলেন। সেখানে একটি ক্লাবে পেশাদার ফুটবলার হিসেবে খেলতেন।

দেশের বাইরে তার ভ্রমণ নিরাপদ কিনা তা জানতে অস্ট্রেলিয়া ছাড়ার আগে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের শরণাপন্ন হন তিনি। তখন বাহরাইন ছাড়া যে কোনো দেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল।

যদিও তার বোন বাহরাইন থেকে তাকে ঝুঁকির ব্যাপারে হুশিয়ারি করেছিলেন। কিন্তু বোনকে তিনি সান্ত্বনা দিয়েছিলেন এই বলে- ‘আমি এখন অস্ট্রেলিয়ায় সুরক্ষায় আছি। তারা আমার কিছু হতে দেবে না।’

কিন্তু থাই বিমানবন্দরে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে দেশটির কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে। বাহরাইনের অনুরোধে নিয়মের বাইরে গিয়ে ইস্যু করা ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়েছে।

বিধিমালা অনুসারে শরণার্থী ও রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের ক্ষেত্রে রেড নোটিশ জারি করতে পারে না ইন্টারপোল। পরে গত ৪ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে জারি করা নোটিশ তুলে নেয় বিশ্ব পুলিশ সংস্থাটি।

এর পর তাকে মুক্তি দিতে অস্ট্রেলীয় সরকারের চাপ দিলে তার আটকাদেশ ৬০ দিন বাড়িয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নিবর্তনমূলক আইনের জন্য বিখ্যাত থাইল্যান্ড। তাকে প্রত্যর্পণে আদালতের রায়ও স্থগিত করা হয়েছে।

আল আরাবি বলেন, এখানে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করার কিছু নেই। মূলত শাস্তি দিতে বাহরাইন আমাকে ফেরত নিতে চায়। কারণ শিয়াদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের কারণে শেখ সালমানকে আমি খারাপ মানুষ বলেছি ও ভয়ঙ্কর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছি।

আটকের পর বাহরাইন সরকার তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগের চেষ্টা করেনি বলে নিশ্চিত করেছেন এ আরব ফুটবলার। তিনি বলেন, বাহরাইনের প্রত্যর্পণ নিয়ে আমি আতঙ্কিত। একশ ভাগ শঙ্কিত। কারণ তারা আমাকে আটক করেছেন। ফের আমাকে তারা নির্যাতন করবে। এমনকি তাকে হত্যা করেও ফেলতে পারে বলে জানান তিনি।

২০১২ সালে আল শাবাব ফুটবল দলের হয়ে খেলার সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশ স্টেশনে হামলার অভিযোগে রাস্তা থেকে তাকে আটক করে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। তার ভাইয়ের বিরুদ্ধেও ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে রুজু করার এসব মামলা মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেন আল আরাবি। কারণ যখন পুলিশ স্টেশনে ভাঙচুর হয়, তখন তিনি লীগের হয়ে ফুটবল খেলছিলেন।

কিন্তু ওই বছর গণতন্ত্রের পক্ষে আরব বসন্তে তার ভাইয়ের অংশগ্রহণে সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি। আর এ কারণেই নির্যাতনের খড়গ চেপেছে তাদের ওপর। এ ছাড়া তিনি নিজেও একজন শিয়া মুসলমান।

থাইল্যান্ডের কারাগারকে নরক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, প্রথম দুদিন তারা আমার চোখ বেঁধে রেখেছিল। আমার মুখে ও পায়ে আঘাত করেছে। কয়েকজন পুলিশ মিলে একটানা পাঁচ ঘণ্টা আমাকে পিটিয়েছে।

‘তারা আমার মুখে ও পিঠে শীতল পানি ঢেলে দিয়েছে। তাদের ইচ্ছামতো আমার মুখ থেকে কথা বের করতে যাচ্ছেতাই নির্যাতন করেছে।’

‘তাদের যখন জিজ্ঞাসা করেছি, আমার অপরাধ কী? জবাবে তারা চিৎকার করে ওঠে আমাকে চুপ থাকতে বলেন এবং এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকেন,’ জানান আল আরাবি।

এর আগে বাহরাইনে মাস তিনেক আটক থাকার পর তিনি জামিনে ছাড়া পান। তার বিরুদ্ধে মামলা ছিল খুবই ঠুনকো। কাজেই তা নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার কথা।

কিন্তু ২০১৪ সালে যখন বাহরাইনের জাতীয় দলের হয়ে তিনি কাতারে খেলতে যান, তখন তার কাছে ফোন আসে- তার ভাই ও সহযোগীরা ভাঙচুরের মামলায় দোষী সাব্যস্ত। তাদের ১০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।

বর্তমানে তার ভাই বাহরাইনের কারাগারে আটক রয়েছেন। আল আরাবি বলেন, ফোন পাওয়ার পর আমি জানতাম আমার আর বাহরাইনে ফেরা হবে না।

এর পর প্রথমে ইরান, তার পর মালয়েশিয়া এবং পরে থাইল্যান্ড হয়ে ছয় মাসের দীর্ঘ যাত্রা শেষে অস্ট্রেলিয়ায় আশ্রয় নেন তিনি।

২০১৪ সাল থেকে তিনি মেলবোর্নেই থাকতেন। সেখানে বিয়ে করে সংসারি হন ও পেশাগত ফুটবলে মনোযোগ দেন।

বুধবার অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যারিস পেইন বলেন, আল আরাবির বর্তমান আটকাবস্থা নিয়ে তার সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

আল আরাবির প্যাসকোস ভ্যালে এফসি ক্লাবের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার ফুটবল দলও যোগ দিয়েছে তার মুক্তির আন্দোলনে। বিক্ষোভ প্রতিবাদ, খেলার আগে ১ মিনিটের নীরবতা সবই করে যাচ্ছে।

Bootstrap Image Preview