আর মাত্র কয়দিন বাদেই শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। বিশাল সিলেবাস শেষ করা, রিভিশন করা, নোটগুলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া, সময় ধরে লেখার চর্চা করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। একটু নড়েচড়ে বসলেই মা-বাবার বকুনিও খেতে হচ্ছে। মাঝেমাঝে মনে হচ্ছে এত পড়া সামলাতে পারবো তো? সব কমন আসবে তো? লিখতে পারবো তো ঠিকঠাক? এমন প্রশ্ন প্রতিটি শিক্ষার্থীর মনে।
ছাত্রজীবনে পরীক্ষার তো কোনো শেষ নেই। শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষা মানেই বিশাল এক আতঙ্কের নাম, আর ভালো ফল তো অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু এত ভয় না পেয়ে শিক্ষক আর অভিভাবকদের সহায়তায় নিয়মিত কিছু টিপস মেনে চললে পরীক্ষায় ভালো কিছু করা সম্ভব। থাকছে তেমনই কিছু টিপস-
খাতায় সুন্দর ভাবে উপস্থাপন
কথায় বলে, প্রথমে অবশ্যই দর্শনধারী, পরে গুণবিচারী। পরীক্ষার খাতায় সুন্দর হাতের লেখা এবং গোছানো উপস্থাপন দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষকদের। এতে নম্বরও ভালো পাওয়ার আশা থাকে। অনেক ভালো প্রস্তুতির পরেও অনেক সময়ে ভালোভাবে খাতায় লিখতে পারে না অনেকে। ভুলে যাওয়া, হাতের লেখা খারাপ, মনোযোগ বসাতে না পারার কারণে লেখা খারাপ হয়ে যেতে পারে। তাই বাসায় বসেই বেশি বেশি লেখার চর্চা করতে হবে। সঙ্গে প্রয়োজন টাইম ম্যানেজমেন্টও।
নিয়মিত ক্লাসের লেকচার ফলো করা
ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস লেকচার শুনতে হবে। কারণ পরীক্ষায় কি আসতে পারে তা নিয়ে শিক্ষকরা ক্লাসেই ধারণা দেন। দিয়ে থাকেন। এছাড়া কঠিন বিষয়গুলো ক্লাসে শিক্ষকের কাছ থেকে বুঝে নিলে তা অনেকদিন পর্যন্ত মনে থাকে। তাই নিয়মিত ক্লাস লেকচার ফলো করলে পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
নোট তৈরি করা
নোট করে পড়া ভালো ফলাফলের জন্য বেশ কার্যকর। ভালো নোট পড়তে মনোযোগ বাড়ায়, পড়াকে আকর্ষণীয় করে তোলে। তাছাড়া নোট রাখলে পরীক্ষার আগে এক বা একাধিকবার বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এতে প্রস্তুতি নিতে সুবিধা হয়।
একটানা বেশিক্ষণ পড়াশোনা নয়
একটানা কোনো কাজই বেশিক্ষণ করা ঠিক নয়। বিজ্ঞান বলে, আমাদের মস্তিষ্কের তথ্যধারণ ক্ষমতা ২৫-৩০ মিনিট পরিশ্রমের পর কমতে থাকে। তাই ঘন্টার পর ঘন্টা টানা বই নিয়ে বসে থাকার প্রয়োজন নেই। পড়ার সময়টা ছোট ভাগে আলাদা করে সাজাতে হবে।
এই প্রতিটা ভাগ শেষ হলে ৫-১০ মিনিটের বিরতি নিতে হবে। এই বিরতিতে টুকটাক খাওয়া, গল্প করা, টিভি দেখা, গান শোনা, হাঁটাহাঁটি করে নিতে হবে। এরপর সতেজ মনে আবার পড়াশোনা শুরু করতে হবে।
রুটিন করে পড়া
আমরা সেই ছোটবেলা থেকে ছড়া, কবিতা, রচনা দাঁড়িকমাসহ মুখস্থ করে ফেলতাম, সেগুলো পরীক্ষার খাতায় লিখে অনেক নম্বরও পেতাম। সেই অভ্যাস আমাদের রয়েই গেছে। এখনকার পড়াশুনায় মুখস্তের চেয়ে বুঝে পড়ার ফলাফল বেশি ভালো হয়। কারণ সবকিছুর ব্যাখ্যা জানলে যেকোনোভাবে প্রশ্ন আসলেই তার উত্তর দেওয়া যায়। নিজের সুবিধামতো প্রতিটা পড়া এমনভাবে বুঝতে হবে যাতে মনে থাকে বা অন্যকে বোঝানো যায়। আর অবশ্যই কখন কোনটা পড়বেন, সেটার একটা রুটিন বানিয়ে নেবেন।
বিভিন্ন উৎস থেকে পড়া
বুঝে বুঝে পড়ার একটি চমৎকার উপায় আছে। সেটা হলো একই বিষয় বিভিন্ন উৎস থেকে পড়া। একটি উৎস বা লেখা সব ধারণা নাও দিতে পারে। তাই সম্ভাব্য একাধিক উৎস থেকে শেখার চেষ্টা করতে হবে। বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা, গ্রুপ স্টাডি, বিভিন্ন লেখকের বই পড়া, শিক্ষক আর সিনিয়রদের থেকে সাহায্য নিতে হবে। বিশেষ কিছু জানার থাকলে আমাদের ইন্টারনেট তো রয়েছেই।
গ্রুপ স্টাডি
ভালো ফলাফল করার জন্য গ্রুপ স্টাডি খুব গুরুত্বপূর্ণ, বর্তমানে গ্রুপ স্টাডির ধারাও বেশ জনপ্রিয়। কোনো বিষয় একত্রে গ্রুপ করে পড়লে সেটার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হয়। এতে করে পড়াগুলো আয়ত্ত্ব করা সহজ হয়, তেমনি আলোচনার মাধ্যমে জটিল বিষয়গুলো সমাধান হয়।
অতিরিক্ত রাতজাগা যাবে না, খাওয়া-ঘুম হবে পর্যাপ্ত
পরীক্ষার সময় রাত না জাগলে যেন পরীক্ষাই মনে হয় না। এটা একদমই ঠিক নয়। মস্তিষ্কে স্মৃতি তৈরি হয় ঘুমের মধ্যে। তাই পরীক্ষার আগের রাতগুলোর ঘুম খুবই জরুরি। অতিরিক্ত রাত জাগা মস্তিষ্কের ক্ষতি করে, চোখের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সকাল সকাল পড়তে বসবেন। আর একেবারে পরীক্ষার আগের রাতের জন্য সব পড়া জমিয়ে রাখবেন না।
পুরোটা পরীক্ষার সময়ে খাওয়াদাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। চিন্তায় খাওয়া বাদ দিলে চলবে না। আর নিয়মিত কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে দিনে।
মনে রাখতে হবে, নিজের আত্মবিশ্বাস আর চেষ্টা সবচেয়ে জরুরি। পরীক্ষার কয়েকটা দিন মাথা ঠাণ্ডা রেখে চললে পরীক্ষাকে মোকাবেলা করা এমন কোনো কঠিন কাজ নয়।