Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২১ বুধবার, মে ২০২৫ | ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মসজিদ ভেঙ্গে জায়গা দখলের অভিযোগ

বাকি বিল্লাহ, মনোহরদী প্রতিনিধি।।
প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:১৩ PM
আপডেট: ২৮ জানুয়ারী ২০১৯, ০৫:১৩ PM

bdmorning Image Preview
ফাইল ছবি


নরসিংদী জেলার মনোহরদীর চালাকচর ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল মান্নান মুক্তুর বিরুদ্ধে মসজিদ ভেঙ্গে জায়গা দখলসহ সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন জমি জবরদখল, অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড বসিয়ে অর্থ আদায় ও বেআইনি কার্যকলাপসহ বেপরোয়া চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল মান্নান মুক্তু চালাকচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও সভাপতি। এই দুই পদভারে তিনি বেপরোয়া হয়ে জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছেন। তার রাজনৈতিক প্রভাবের ভয়ে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। চালাকচর বাজারের ব্যবসায়ী ও দোকান মালিকরা সাংবাদিকদের কাছে চেয়ারম্যান মুক্তুর এসব অন্যায়, অত্যাচার ও জুলুমের কথা বিবৃত করেছেন।

অভিযোগকারীরা জানান, চালাকচর বাজারে গেঞ্জি পট্টিতে সরকারী জমির ওপর বাজারের ব্যবসায়ীরা প্রায় ২০ বছর আগে একটি পাকা মসজিদ নির্মাণ করেন। পুরনো এ মসজিদের জমির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে চেয়ারম্যান মুক্তুর। তিনি চালাকচর ইউনিয়ন তহসিলদার মো. জসিম উদ্দিনের যোগসাজসে চারজন ব্যবসায়ীকে দোকান বরাদ্ধ দেয়ার কথা বলে ৪ লাখ টাকা করে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

তিনি মসজিদ কমিটির সাথে আলোচনা না করেই একতলা মসজিদটি ভেঙে গুড়িয়ে দেন। পরবর্তীতে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে এলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসসাদিকজামান নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন পর পুনরায় অস্থায়ীভাবে আবারো একই স্থানে দোকান বসানোর অনুমতি দেন চেয়ারম্যান ও তহসীলদার। আবারো উপজেলা প্রশাসন তা উচ্ছেদ করেন এবং সকলকে সতর্ক করেন।

একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার মোয়াজ্জেম হোসেন বুলবুল চালাকচর ইউপি কমপ্লেক্স ভবন নির্মানাধীন থাকায় বাসির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তির টিনসেট পাকাঘর ভাড়া নিয়ে দাপ্তরিক কাজকর্ম পরিচালনা করতেন। বর্তমান চেয়ারম্যান ফখরুল মান্নান মুক্তু চেয়ারম্যানের চেয়ারে বসেই নতুন কমপ্লেক্স ভবনে উঠেন এবং পুরনো ভাড়া কার্যালয়সহ ঘর মালিকের ৮ শতাংশ জমি নিজে দখলে নিয়ে অন্যত্র ভাড়া দিয়ে আর্থিক ফায়দা লুটতে থাকেন।

এই অবস্থায় জমির মালিক বাসির উদ্দিন জমি ফেরতের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন বিচার পাননি। একই বাজারের মোটর যন্ত্রাংশ ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেনের নিষ্কন্টক ২৩ শতাংশ জমি জোরপূর্বক দখল করে নেন চেয়ারম্যান মুক্তু ও তার চাঁদাবাজ বাহিনী। চালাকচর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের মৃত সাধারণ সম্পাদক শেখ নাইমের মায়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে না পেয়ে চেয়ারম্যান মুক্তু তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন।

সম্প্রতি চালাকচর বাজারে প্রতিষ্ঠিত নোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নির্মল রায়ের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন চেয়ারম্যান মুক্তু। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে চেয়ারম্যানের একান্ত সহচর মাসুদ, কাজলসহ কয়েকজন লোক এসে দিন-দুপুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভেতরে রেখে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। এক সপ্তাহের মধ্যে দাবিকৃত চাঁদা না দিলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বড় ধরনের ক্ষতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেয় চেয়ারম্যানের পালিত সন্ত্রাসীরা।

এছাড়াও চালাকচর বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্ধকৃত জমি উপর ভবন নির্মাণ করতে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট কয়েক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন চেয়ারম্যান মুক্তু। ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও চাঁদা না দেয়ায় ভবনের কাজ বন্ধ করে দেন চেয়ারম্যান ও তার লোকজন।

নোভা ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারের মালিক নির্মল রায় সাংবাদিকদের জানান, চেয়ারম্যান মুক্তুর কারণে প্রতিনিয়ত আতঙ্কের মধ্যে সময় কাটাতে হচ্ছে তাদেরকে। তিনি চেয়ারম্যান মুক্তুর কবল থেকে পরিত্রাণ দাবি করেছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ছিদ্দিক হোসেন সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছেন, ‘সরকার সকল নিয়ম মেনে ২০জন মুক্তিযোদ্ধার নামে যে জমি ইজারা দিয়েছে, একজন চেয়ারম্যান সেই জমিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মার্কেট করতে বাঁধা দিচ্ছে। প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এর সমাধান করতে পারছেনা মুক্তিযোদ্ধারা।’ 

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান ফখরুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এসব ঘটনার সাথে তার কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। চাঁদা আদায় তো দূরের কথা বরং সিএনজি স্ট্যান্ড সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। অন্য অভিযোগগুলোও তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে তিনি উল্লেখ করেন।

Bootstrap Image Preview