রাজধানীর ইস্কাটনে বহুল আলোচিত জোড়া খুনের মামলার একমাত্র আসামি আওয়ামী লীগের নেত্রী ও সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেগম পিনু খানের ছেলে বখতিয়ার আলম রনির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়াও তাকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।
বুধবার (৩০ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মঞ্জুরুল ইমাম এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার আগে আসামি বখতিয়ার আলম রনিকে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে আদালতে আনা হয়। আদালতে উপস্থিত একাধিক আইনজীবী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিচারক রায় ঘোষণার সময় বলেন, আসামিকে এই হত্যা মামলায় ৩০২ ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই ধারায় তার ফাঁসি হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ঘটনার সময় আসামি রনি মদ্যপ থাকায় তার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় এনে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে তাকে যাবজ্জীবন দণ্ড দেয়া হল।
রায়ে বলা হয়, আসামি বখতিয়ার আলম রনি ঘটনার সময় মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তার মেয়ে হাসপাতালে থাকায় তিনি বিষণ্নতায় ছিলেন। তিনি ওই সময় মদ্যপও ছিলেন। তিনি লাইসেন্সবিহীন পিস্তল দিলে মামলার ভুক্তভোগীদের গুলি করেন। তিনি জানতেন গুলি করলে তারা মারা যাবেন।
এ ঘটনায় বখতিয়ার রনি মৃত্যুদণ্ড শাস্তি হয়, কিন্তু তার (রনি) শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হলো। একই সঙ্গে ৫০ হাজার জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর ইস্কাটনে মদ্যপ অবস্থায় রনির পিস্তল থেকে ছোঁড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে দৈনিক জনকণ্ঠের সিএনজি অটোরিক্সাচালক ইয়াকুব আলী এবং রিক্সাচালক আব্দুল হাকিম নিহত হন।
গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর রায়ের ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। সেদিন রায় হয়নি। তার আগে ৮ মে মামলাটি ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে রায় ঘোষণার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওই দিন বিচারক স্বপ্রণোদিত হয়ে রায় ঘোষণার তারিখ বাতিল করে অধিকতর যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন। পরে আসামি পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে ২টার দিকে রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে একটি কালো রঙের প্রাডো গাড়ি থেকে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম আহত হন। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান।
ওই ঘটনায় ১৫ এপ্রিল নিহত হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম অজ্ঞাত পরিচয় কয়েক জনকে আসামি করে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
ওই বছরের ৩০ মে এলিফ্যান্ট রোডের বাসা থেকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে বখতিয়ার আলম রনিকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এরপর থেকে কারাগারেই রয়েছেন রনি।
এ মামলায় ২০১৫ সালের ২১ জুলাই ডিবি পুলিশের এসআই দীপক কুমার দাস রনির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ২০১৬ সালের ৬ মার্চ রনির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ সামছুন নাহার।