Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০৭ বুধবার, মে ২০২৫ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

রাবিতে হাসান আজিজুল হকের ৮০তম জন্মোৎসব উদযাপন

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:৩৮ AM
আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ১১:৩৮ AM

bdmorning Image Preview


বর্ণাঢ্য আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের ৮০তম জন্মোৎসব উদ্যাপন করা হয়েছে। কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক-এর ৮০তম জন্মোৎসব উদ্যাপন পরিষদ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে এই জন্মোৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হাসান আজিজুল হককে ফুলেল শুভেচ্ছা ও উত্তরীয় প্রদান করা হয়। পরে রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক কথাসাহিত্যিকের হাতে সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেন। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক বাকি জীবন লেখালেখির মধ্যে ব্যস্ত থাকতে চান বলে জানান।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনসহ রাজশাহীর বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়। কথাসাহিত্যিককে নিয়ে লেখা মানপত্র পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা। এ সময় কথাসাহিত্যিককে নিয়ে লেখা একটি স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহীর কবিকুঞ্জের সভাপতি ও জন্মোৎসব উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামাণিক।

অনুষ্ঠানে কথাসাহিত্যিকের কন্যা সুলতানা শরমিন জাহান তোতনের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নাতি অনির্বাণ হাসান অনিন্দ্য পিয়ানো বাজিয়ে উপস্থিত দর্শকদের মন কাড়েন। শেষে বরেণ্য এই কথাসাহিত্যিকের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্মকে উপজীব্য করে নির্মিত প্রামাণ্য চলচ্চিত্র ‘গল্পলোকের চিত্রকর’ প্রদর্শিত হয়। এদিন মিলনায়তনের সামনে এই কথাসাহিত্যিকের সকল গ্রন্থের প্রদর্শনী ও বিক্রয় অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী ও বিক্রয় চলে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে হাসান আজিজুল হক  কিশোরবেলার গল্প শোনান। তিনি বলেন, ‘পাঁচ কী ছয় বছর বয়সে পাঠশালায় পড়ালেখা জীবন শুরু। আমার পিতা ছিলেন দাশরথি পাঠক। তিনি ছিলেন গম্ভীর প্রকৃতির আর বেশ নিষ্ঠাবান ছিলেন। তিনি আমাকে খুব ভালবাসতেন।

তিনি বলেন, ‘এই বয়সে আসার আগে অনেক কিছুর অভাব হয়েছে আমার কিন্তু  মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসার অভাব হয়নি। সবার ভালবাসা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমি যা জানতাম তা সবসময় মানুষকে জানানোর চেষ্টা করেছি। অন্যের থেকে নিজের অজানাকে আবিষ্কার করেছি। এখন বয়স বেড়েছে, আগের মতো সবকিছু করতে পারি না। তবে এখনও স্মৃতিশক্তি কমে যায়নি। যে কয়দিন বাঁচি লেখালেখি চালিয়ে যেতে চাই। আমার লেখায় যদি মানুষের কল্যাণ হয় এবং পাঠক যদি আনন্দিত হয় এতেই আমি নিজেকে স্বার্থক মনে করবো।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মো. জাকারিয়া, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান, অধ্যাপক মিজানউদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইমেরিটাস অরুণ কুমার বসাক, পুন্ড্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মোকলেসুর রহমান, কবি জুলফিকার মতিন, ভাষাসৈনিক মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জি,  রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীন, কবিকুঞ্জের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল হক কুমার, রাবির ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সাজ্জাদ বকুলসহ রাজশাহীর গুণি ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা কথাসহিত্যিককে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান এবং তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।

উল্লেখ্য, হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের  ফেব্রুয়ারি বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর হাসান আজিজুল হকের ছেলেবেলা কেটেছে যবগ্রামেই। ১৯৫৪ সালে তিনি যবগ্রাম মহারানি কাশিশ্বরী ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে খুলনার দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এ সময় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ফলে তৎকালীন পাকিস্তান প্রশাসনের নির্যাতন ভোগের পর তিনি রাজশাহী কলেজে এসে ভর্তি হন। ১৯৫৮ সালে এ কলেজ থেকে দর্শনে স্নাতক (সম্মান) ও ১৯৬০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স উত্তীর্ণ হন তিনি। এরপর বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা শেষে ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। 

Bootstrap Image Preview