কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নির্মাণাধীন ভবনের তিন তলার ছাদ থেকে ছিটকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নির্মাণ শ্রমিক সারওয়ার জাহান। এদিকে সারওয়ারের দুর্ঘটনার সংবাদ শুনে তার পিতা আব্দুর রহমান হৃদযন্ত্রেক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সম্প্রসারিত অংশের কাজ চলাকালীন সময়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পূর্বেও এ ভবন থেকে পড়ে গত বছরের ২ ডিসেম্বর এক শ্রমিক গুরুতর আহত হয়। নির্মাণকাজে নিয়োজিত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ষ্টারলাইট সার্ভিসেস লিঃ এর গাফিলতির কারণেই বারবার এমন দূর্ঘটনা ঘটছে বলে জানায় কর্মরত শ্রমিকরা।
এদিকে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার বিষয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ষ্টারলাইট সার্ভিসেস লিমিটেড, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রকল্প পরিচালক, এক্সিয়েন, রেজিস্ট্রার, প্রক্টরসহ কেউই এ বিষয়ে জনে না।
নিহত শ্রমিকের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার আমড়ানিয়া পাড়া গ্রামে। এদিকে সারওয়ারের দুর্ঘটনার সংবাদে তার পিতা আব্দুর রহমান হৃদযন্ত্রেক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যায়। পিতা এবং সন্তানের মৃত্যুতে শোকে দিশেহারা নিহত শ্রমিক সারওয়ারের পরিবার।
জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের তৃতীয় তলায় কাজ করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে যায় সারওয়ার। সেখানে থাকা শ্রমিকরা তাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায় সেখানে থেকে তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এঘটনায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক সফিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘শ্রমিকের মৃত্যু সম্পর্কে জানিনা। তবে বিষয়টি নিয়ে মিলনের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বরত কর্মকর্তা মোঃ মিলনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হয়নি।
ভবন থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু এবং নির্মাণ কাজ চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের সহকারী পরিচালক মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘শ্রমিকের মৃত্যুর ব্যাপারে আমি পূর্বে জানতাম না আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের করার কাজ প্রকৌশল দপ্তরের।’
প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. শহিদুল হাসান বলেন, ‘পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তর আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দেয় আমরা সেভাবেই কাজ করি।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাকে নির্দেশনা দেওয়া হলে আমি সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তবে শ্রমিকের মৃত্যুর বিষয়ে আমি জানি না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘আমি বিষয়টি মাত্রই জানলাম। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার সাথে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।’