বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের ভেতরে দু'টি গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছে, যার সূত্র ধরে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতিসহ সবকিছুই চলছে ঝিমিয়ে। ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও যাবতীয় কার্যক্রম অর্ধেকও সম্পন্ন হয়নি। প্রতিবার ২/৩ মাস সময় হাতে নিয়ে প্রস্তুতির কাজ শুরু হলেও এবার পুরোদমে কাজ শুরু হলো আজ শুক্রবার থেকে। তবে শেষ হওয়া নিয়ে শঙ্কা।
এছাড়া এসব কোন্দলে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের কারণে এবারের ইজতেমায় অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে উপস্থিতি কম হতে পরে। ইজতেমা ময়দানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে দুই ভাগে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মনে এখনো একধরণের ভীতি কাজ করছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, চার দিনব্যাপী বিশ্ব ইজতেমা আগামী ১৫ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম দু’দিন অর্থাৎ ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি তাবলিগের মুরুব্বি মাওলানা মো. যুবায়েরের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে। পরবর্তী দু’দিন ১৭ ও ১৮ ফেব্রুয়ারি ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালিত হবে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে। তবে প্রশাসন দুই পক্ষের সাথেই সমন্ময় করে শান্তিপূর্নভাবে শেষ করার জন্য সবধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজ শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) টঙ্গীর তুরাগতীরে ইজতেমা মাঠে সরোজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মূল স্টোইজ থেকে কাজ শুরু করা হয়েছে। বুধবার থেকে কাজ শুরু হলেও আজই পুরুদমে কাজ করতে দেখা যায়।
মাঠের বড় একটা অংশ জুড়ে গত বছরের টানানো সামিয়ানা দেখা গেছে। যার বিরাট অংশই বাদ দিতে হবে। এ কারণে প্রায় ৮০ লক্ষ টাকার চট সামিয়ানার জন্য নেয়া হবে বলে জানা যায়।
এছাড়া সেনাবাহীনীর পক্ষ থেকে প্রায় পাঁচটি অস্থায়ী ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। যার কাজ গত দুই দিন ধরেই চলছে। এছাড়া তাবলীগ জামাতের যে জনবল কাজ করার কথা তার পুরো সংখ্যক লোকজন এখনো পৌঁছায়নি।
ইজতেমার প্রস্তুতির জন্য আগত মো: হারুনুর রশীদ বলেন, আমরা আজকে এসেছি এবং কাজ শুরু করেছি। তবে সামনে সময় কম। যাবতীয় কাজ শেষ করা যাবে না।
হাতে যে পরিমান সময় আছে তাতে কাজ শেষ করা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বিডিমর্নিংকে বলেন, তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা ভারতীয় মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির অনুসারীদের সাথে দ্বন্দ্বের কারণেই মুলত সব আয়োজনই পিছিয়ে। তবে প্রস্তুতির কাজ স্বাভাবিক গতিতেই এগিয়ে চলছে।
দুপক্ষের সংঘর্ষের কারণে ১৫ ফেব্রুয়ারি ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয়া হলেও কোনো পক্ষই ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি কাজে অংশগ্রহণ করেনি। পরে প্রস্তুতি কাজ সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিয়ে বুধবার বিকেলে ইজতেমা মাঠে ত্রিপক্ষীয় এক জরুরি বৈঠকে ১০ শর্ত মাথায় নিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রস্তুতি শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
১। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি মাওলানা জোবায়েরের অনুসারীরা ইজতেমা শুরু করে ১৬ ফেব্রুয়ারি মাগরিবের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ করে চলে যাবেন। ২। মাওলানা সা’দ অনুসারীগণ ১৭ ফেব্রুয়ারি ফজরের নামাজের পর ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করবেন এবং ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি সা’দপন্থী ওয়াসিফুল ইসলাম অনুসারীগণ ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে তাদের দুইদিনের ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। ৩। মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা বুধবার থেকে ইজতেমা মাঠ প্রস্তুতি কাজ শুরু করবেন। ৪। মাওলানা জোবায়ের পন্থীরা ১৬ ফেব্রুয়ারি বাদ মাগরিব আখেরি মোনাজাত শেষ করে মাঠ ছেড়ে চলে যাবেন। ৫। জোবায়ের পন্থী লোকজন প্রশাসনের উপস্থিতিতে সা’দ পন্থীদের কাছে মাঠ বুঝিয়ে দেবেন। ৬। দুই পক্ষের ইজতেমা শেষে ইজতেমা মাঠের প্রস্তুতি কাজে লাগানো সরঞ্জামাদীর বিষয়ে দুই পক্ষের মুরুব্বীরা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। ৭। ইজতেমা শেষে ময়দানে মুসল্লিদের ব্যক্তিগত মালছামানা ছাড়া বাকি সকল মালামাল স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে থাকবে। ৮। মাওলানা জোবায়ের অনুসারী বিদেশি মেহমানরা দুইদিন ইজতেমা শেষে উত্তরা হাজী ক্যাম্পে অবস্থান করবেন। ৯। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাওলানা সা’দ বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন না। ১০। ইজতেমা চলাকালীন উভয় পক্ষের তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিরা টঙ্গীর আশপাশ এলাকার মসজিদে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করবেন।-সংগৃহীত।
এদিকে ইজতেমার প্রঙ্গনের বিদেশী কামড়ায় শুনশান নিরবতা। অন্যান্য বছরে যেখানে উতসবমুখর দেখা যায় বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথীদের। এর কারন হিসেবেও দন্দ্বকে উল্লেখ করা হচ্ছে। তাবলিগ জামায়াতের জোবায়েরের অনুসারী একটি সূত্র বিডিমর্নিংকে জানান, এবার বিদেশীরা কম এসেছেন তবে তারা এখানে অবস্থান না নিয়ে দেশের বিণ্নি প্রন্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন।
প্রস্ততির সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা সাদ বিরোধী অংশের একজন নেতা মাহফুজ হান্নান বিডিমর্নিংকে বলেন, আমরা এবার প্রস্তুতিতে পিছিয়ে থাকলেও ইনশাল্লা ভালোভাবেই সমন্ন হবে এবারের ইজতেমা। স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে আমরা যোগাযোগ রেখেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করে যাচ্ছি। তবে জনসমাগম কম হওয়া নিয়ে যে আশঙ্কা করা হচ্ছে তা নিয়ে তিনি বলেন, এবার ব্যাপক সমাগম হবে ইনশ্ল্লাহ।
এদিকে সরকার পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। প্রয়োজনে সেনবাহিনীর সদস্যরাও ময়দানে থাকবেন বলে জানা যায়।