ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোঃ হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেছেন, নেতৃত্ব মানে নিজে জানা, মানা এবং অন্যকে জানানো। গতানুগতিকতায় গা ভাসিয়ে লিডার হওয়া যায় না। বৃত্তাবদ্ধ থেকে কখনও বিখ্যাত লিডার হওয়া যায় না। জীবনের যে পথটি কন্টকাকীর্ণ, যে পথে খুব কম মানুষ গেছে, যে পথ অমসৃণ-বন্ধুর এবং শ্বাপদসঙ্কুল সেই পথ বেছে নেয়াই হচ্ছে প্রকৃত নেতৃত্বের কাজ।
শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে আইন অনুষদের আয়োজনে 'উচ্চ শিক্ষার মানোন্নয়নে নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা' শীর্ষক সেমিনার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
ড. রশিদ আসকারী বলেন, আমরা বাঙালি জাতির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাই, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান আসামি ছিলেন। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে যদি পাক সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বুক কাঁপানো আন্দোলন গড়ে তোলা না যেত, তাহলে সেদিন প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুদণ্ড অনিবার্য ছিল এবং সে সময় বঙ্গবন্ধুর সামনে কোন রাস্তা ছিলনা।
তার জন্য কবর খোড়া হয়েছিল, এমনকি ফাঁসির মঞ্চেরও হাত ছানি ছিল। সমস্ত কিছুতে অগ্রাহ্য করে সেদিন বঙ্গবন্ধু অমসৃণ, শক্ত বন্ধুর পথকে বেছে নিয়ে ছিলেন এক দেশ মানুষের মুক্তির নেশায়। তাই প্রকৃত লিডারশিপ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
তিনি বলেন, নেতৃত্বের পথ কিন্তু এত সহজ, সরল নয়। এটি বক্র এবং কন্টকাকীর্ণ। আমরা যারা নেতৃত্ব দিতে চাইবো তাদেরকে সেই দুর্গম পথটাকে বেছে নিতে হবে। ছকবদ্ধ জীবনে হয়তো কোন মানুষের জন্য সুখের কিন্তু জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের। কারণ জাতি চাইবে সে রকম জনগোষ্টি উৎপাদন করতে। যে নিজের এবং পরিবারের দায়ভার নিয়েও তার জীবন এবং জীবন সংগ্রামের বেশ খানিকটা উৎসর্গ করবে তার সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্যে।
তিনি আরও বলেন, দেশ তোমাকে কি দিতে পারবে সেটি বড় কথা নয়, দেশকে আমি কি দিতে পারবো সেটার হিসেব কষতে হবে।নন্দলালের মতো সারাজীবন নিজের স্বার্থবুদ্ধি, বিষয়বুদ্ধি চার দেওয়ালে ঘেরা টপের মধ্যে আবদ্ধ থাকা লিডার শিপের কাজ নয়। লিডার শিপ হচ্ছে দেশের কথা, দশের কথা এবং পৃথিবীর কথা ভাবা। নিজের উপর অর্পিত দায়িত্ব সততা ও দক্ষতার সাথে পালনের মাধ্যমেই লিডার শিপ তৈরি করা সম্ভব।
আইন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. রেবা মন্ডলের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ইউনির্ভাসিটি অব লিবারেল আটর্স বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এইচ এম জহিরুল হক বলেন, নিজের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। তাহলে সমাজ পরিবর্তন হবে।
তিনি বলেন, নিজেকে লিডার হিসেবে তুলে ধরতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, প্রতিষ্ঠানকে নিজের মনে করতে দেখতে হবে, সেবার মানসিকতা থাকতে হবে, সব কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে এবং সৎ হতে হবে। তাহলে নিজেকে একজন ভাল লিডার হিসেবে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. অরবিন্দ সাহা ও কুষ্টিয়া রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাষ্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ জহুরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রভাষক বনানী আফরিন। দিনব্যাপী এ সেমিনারে আইন অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।