ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট নামে পরিচিত কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ। এই দুই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজের পছন্দের ও বিতর্কিত প্রার্থীদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি।
সূত্র জানায়, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে বদির নিজ ঘরে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব পদ-পদবী। এর মধ্যে নিজ ঘরে সংসদ সদস্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ একাধিক পদ থাকার সত্বেও নিজের অসুস্থ শ্বশুরকে উখিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ভাগিয়ে আনতে কেন্দ্রে জোর তদবির চালাচ্ছেন বদি।
অন্যদিকে টেকনাফ উপজেলায় নৌকার প্রার্থী হিসেবে বদির ফাস্ট চয়েস স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদার টেকনাফ উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যন জাফর আলম। সীমান্ত এই দুই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বদির ব্যবসায়িক পার্টনার ও শ্বশুরকে দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে নিতে কেন্দ্রা জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করে সূত্রটি।
কারণ সাবেক এই সাংসদের নিজের বলয় সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফে রয়েছেন বদির স্ত্রী বর্তমান সাংসদ শাহিন আকতার, টেকনাফ পৌর মেয়র বদির চাচা মোহাম্মদ ইসলাম। এর বাইরে অন্যান্য অধিকাংশ পদও রয়েছে বদির হাতে। এর মধ্যে টেকনাফের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বদির ব্যবসায়ীক পার্টনার। আর ইয়াবার ‘গডফাদার’ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ প্রশাসনের করা একাদিক তালিকায় তার নাম রয়েছে। কিন্তু বদি এবারও তার এই ব্যবসায়িক পার্টনার জাফর আলমকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী করতে জোর তদবির চালাচ্ছেন কেন্দ্রে।
এ ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর বলেন, সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি ও টেকনাফ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জাফর আলমের নাম প্রশাসনের বিভিন্ন তালিকায় ইয়াবার সাথে সম্পর্কিত থাকার বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে উপজেলা আওয়ামী লীগ বহুবার সমালোনার মুখে পড়েছেন।
সাম্প্রতি বদির ৪ ভাই ও জাফর চেয়ারম্যানের এক ছেলে নিজরা ইয়াবা ব্যবসার সাথে জড়িত বলে দোষ স্বীকার করে আত্মসমর্পণ করেছেন। এতে বদি ও জাফর আলমের ইয়াবা সম্পৃক্ততার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইয়াবা পাচার বন্ধে এই দুই শীর্ষ ‘গডফাদার’ এর ক্ষমতা কমাতে হবে। উপজেলা নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে দিতে বদি এখন কোটি টাকার মিশন নিয়ে ঢাকায় লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্র থেকে আরো জানায যায়, বর্তমানে উখিয়া -টেকনাফ সাবেক সাংসদ বদির ঘরের মানুষদের হাতেই রয়েছে। উখিয়া উপজেলার দলীয় ও অন্যান্য সব ক্ষমতা এখন বদি কেন্দ্রিক। বর্তমান সাংসদ বদির স্ত্রী শাহীন আক্তার চৌধুরীর পৈতৃক উপজেলা উখিয়ায়। আর উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদির শ্বশুর হামিদুল হক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বদির শ্যালক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, উখিয়ার জেলা পরিষদ সদস্য হুমায়ুন কবির চৌধুরীও বদির আপন শ্যালক। দলীয় সব পদ-পদবী সাবেক সাংসদ বদির ঘরে হওয়ায় ক্ষিপ্ত উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বদির পরিবারে অবশিষ্ট যে সব পদবী রয়েছে সে সব পদও তারা একই পরিবারে উপহার দিয়ে আর কারো আওয়ামী লীগ করার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা কর্মীরা।
এর আগেও সাংসদ থাকা অবস্থায় বদির বিতর্কিত ভূমিকার কারণে ইউপি নির্বাচনে টেকনাফের ৬টি ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবি হয়েছে। এবারও সাবেক এই সাংসদের এই মিশনে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সূত্র জানায়, কোনো না কোনো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে প্রায়ই আলোচনায় থাকেন উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদি। বিভিন্ন সময় দুর্নীতি মামলা, ইয়াবা ও মানবপাচার বিষয়ে আলোচনায় থাকলেও এবার বদি আলোচনায় এসেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। ইউপি নির্বাচন থেকেই তার এই বিরোধীতা শুরু। পছন্দের প্রার্থীকে জয়ী করতে তিনি আ’লীগ মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।
দলীয় নিয়ম অনুযায়ী, মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক সাংসরা কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম সাংসদ বদি। তাই ইউপি নির্বাচনের পর এবার দুই উপজেলা নির্বাচনেও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছেন তিনি।
এ বিষয় উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবুল মনসুর চৌধুরী জানিয়েছে, উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থী করতে সাবেক সাংসদ বদি সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছেন। বর্ধিত সভায় বদি নিজে উপস্থিত থেকে তার শ্বশুর হামিদুল হক চৌধুরীকে একক প্রার্থী করতে চেষ্টা চালায়। কিন্তু আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা থেকে তিন জনের নাম কেন্দ্রে পাঠানোর বিধান থাকায় আবদুর রহমান বদির শ্বশুর হামিদুল হক চৌধুরী, শ্যালক হুমায়ুন কবির চৌধুরী ও মামা শ্বশুর শাহ আলমের নাম উপজেলা থেকে নিজের পছন্দের প্রার্থীদের নাম জেলা আওয়ামী লীগের কাছে পাঠায়। বদির প্রভাবের কারণে উপজেলার আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা মূল্যায়িত হতে পারেনি বলে এই প্রতিবেদকে অভিযোগ করেন একাধিক প্রার্থী।
এই ব্যাপারে স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার টেকনাফে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম জানান, গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে তিনি নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করতে উপজেলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। জনমত জরিপেও তিনি এগিয়ে আছেন বলে দাবি করেন তিনি। এবারও উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রতীক নৌকা পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা বলেছেন, কোনো ইয়াবা কারবারি বা গডফাদার অথবা পৃষ্টপোষকে উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাক সেটি তারা চান না। চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীদের কেন্দ্র থেকেও মনোনয়ন দিবে না বলেও জানান তিনি।