Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

আটক সেই পাইলটের ‘মুক্তি’ নিয়ে মুখ খুললেন ইমরান খান

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:৩৭ PM
আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, ০৭:৩৭ PM

bdmorning Image Preview


ভারতীয় উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তামন অভিনন্দনকে ফেরত দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এ ব্যাপারে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উত্তেজনা কমানোর এই পদক্ষেপকে দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত হবে না।’

বৃহস্পতিবার দেশটির পার্লামেন্টে যৌথ অধিবেশনে এই ঘোষণা দেন।

ইমরান খান বলেন, শান্তির ইঙ্গিত হিসেবে আটক ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে শুক্রবার ফেরত দেয়া হবে।

এর আগে বুধবার কাশ্মীরে অনুপ্রবেশের অভিযোগে গুলি চালিয়ে পাকিস্তানি দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান। এর মধ্যে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে একটি এবং অপরটি ভারতে ভূপাতিত হয়। পাক-কাশ্মীরে ভূপাতিত হওয়ার উত্তেজিত জনতার হাত থেকে ভারতীয় ওই পাইলটকে উদ্ধার করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানান, ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে ফেরালে যদি ভারত-পাক উত্তেজনা প্রশমিত হয়, তাতে আপত্তি নেই পাকিস্তানের। এ ব্যাপারে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে কথা বলতে চান ইমরান খান।

তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যেন এর বাইরে যেতে না পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভূমিকা রাখবে বলে আমি আশা করছি।’

পাকিস্তানের গণমাধ্যমের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ভারতের গণমাধ্যম যুদ্ধের হিস্টিরিয়া তৈরি করেছে। আমাদের গণমাধ্যম একাত্বতা দেখিয়েছে এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করেছে।’

ইমরান খান বলেন, আমরা বুঝতে পারছিলাম যে, তারা (ভারত) কিছু করবে। কিন্তু আমাদের অভিযান চালানোর উদ্দেশ্য ছিল শক্তি প্রদর্শন এবং আমরা সেটি করেছি।

‘আমরা ভারতের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটাতে চাইনি। সেজন্য দায়িত্বশীল উপায়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম। আমি আগেই বলেছি, ভারত যদি কিছু করে, তাহলে আমরা তার জবাব দেব।’ তিনি বলেন, ভারত জাতিসংঘের আইন লঙ্ঘন করেছে। তারা আক্রমণ চালানোর দু’দিন পর আজ আমাদের কাছে কিছু নথি দিয়েছে।

পাক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভুল হিসেবের ফলে অনেক দেশ ধ্বংস হয়েছে। যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। ভারত যদি কোনো পদক্ষেপ নেয়, তাহলে আমাদের প্রতিশোধ নিতে হবে। কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এক দিক থেকে কাশ্মীরি নেতারা বিচ্ছিন্ন হতে চাননি। কিন্তু ভারতের নৃশংসতার কারণে আজ তারা সবাই স্বাধীনতা চান।

কাশ্মীরের সব ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করার এই প্রবণতা কত দিন পর্যন্ত চলবে, প্রশ্ন ইমরান খানের।তিনি বলেন কাশ্মীর ইস্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেয়া উচিত নয়। নতুবা পাকিস্তান প্রতিশোধ নেবে।

এর আগে দেশটির টেলিভিশন চ্যানেল জিও নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি বলেন, যদি উত্তেজনা কমিয়ে আনে তাহলে পাকিস্তান ভারতীয় পাইলটকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে।

এদিকে যে কোনওরকম ইতিবাচক পদক্ষেপেই প্রস্তুত তাঁরা। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে জানালেন পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি।

তবে সূত্রের খবরে জানা যায়, অভিনন্দনকে ফেরাতে ভারত কোনওরকম আপসে যাবে না। নিঃশর্তেই বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডারকে ফিরিয়ে দিতে হবে পাকিস্তানকে।

গত বুধবার ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিমান ভেঙে পড়ে পাকিস্তানে। যদিও বিমানটি গুলি করে নামানো হয় বলে দাবি পাকিস্তানের। বিমানের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করে তারা। সেই থেকে ইমরান খান সরকারের উপর চাপসৃষ্টি করছিল ভারত। অবিলম্বে অভিনন্দনকে নিরাপদে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিল। তা না হলে আন্তর্জাতিক মহলেও বিষয়টি তোলা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয় ভারত।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, ফ্লাইট সুট পরা একজন ব্যক্তি হাত পেছনে বাঁধা অবস্থায় কথা বলছেন। নিজের পরিচয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নাম উইং কমান্ডার অভিনন্দন। আমার সার্ভিস নম্বর ২৭৯৮১। আমি এই ফ্লাইটের পাইলট। আমার ধর্ম হিন্দু।’

পাকিস্তানি সেনারা তাকে আরও প্রশ্ন করতে গেলে জবাবে তিনি বলেন, দুঃখিত স্যার। আমার এটুকুই বলার অনুমতি রয়েছে।’

এর পর তিনি কাউকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমি কি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি আছি কিনা- এটি জানা আমার অধিকার।’ সেসময় তাকে আরও প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দিতে অস্বীকার করেন।

অভিনন্দন সম্পর্কে আরও তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। জানা গেছে, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম তানভী মারওয়াহা। তাদের ঘরে একটি সন্তান আছে তার নাম এ. তাভিস। তার বাড়ি ভারতের চেন্নাইয়ে।

পারিবারিকভাবেও তার শরীরে বইছে সৈনিকের রক্ত। তার বাবা সিমহাকুট্টি বর্তমান ছিলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর একজন এয়ার মার্শাল, একসময় কলকাতাতে ইস্টার্ন এয়ার কমান্ডের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। স্বভাবত বাবাকে দেখেই অভিনন্দনের সেনাবাহিনীতে আসা। ভারতের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির এই স্নাতক বিমানবাহিনীতে ‘কমিশনড’ হয়েছিলেন ২০০৪ সালে।

ভারতীয় বিমানবাহিনীর সবচেয়ে দক্ষ ও যুদ্ধসফল বৈমানিকদের একজন তিনি। অর্থাৎ এলিট ইউনিট ‘স্কাট’ বা `সূর্যকিরণ অ্যারোবেটিক’ টিমের সদস্য অভিনন্দন। এই তরুণ সেনানিই গতকাল বুধবার সকালে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মাটিতে ভূপাতিত হওয়ার পর জীবিত অবস্থায় ধরা পড়েন পাকিস্তানি সেনাদের হাতে। তাকে কেন্দ্র করেই এখন ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান টানটান উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার ভারতীয় জনতা পার্টির প্রচারে এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভাষণ দেয়ার সময় মোদি প্রতিবেশী পাকিস্তান কিংবা দেশটিতে আটক ভারতীয় পাইলটের নাম মুখে নেননি।

এদিকে, নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব কনট্রোল) অতিক্রম করে হামলা চালানোর সময় পাকিস্তানের সেনাদের হাতে আটক ভারতের পাইলটের মুক্তি চেয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর নাতনী ফাতিমা ভুট্টো।

ফাতিমা ভুট্টো লিখেন, শান্তি, মানবাধিকার ও দেশের মর্যাদা রক্ষায় আমি এবং আমার মত অনেক পাকিস্তানি নাগরিক ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে ভারতের পাইলট অভিনন্দনের মুক্তি দাবি করছি।

উল্লেখ্য, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে হামলা চালায় পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ। তাতে প্রাণ হারান ৪৯ জন জওয়ান। কিন্তু পাকিস্তান সরকার হামলা দায় ঝেড়ে ফেলে। হামলায় পাকিস্তানি জঙ্গিদের হাত রয়েছে, ভারত যদি তার প্রমাণ দিতে পারে, তবেই বিষয়টি নিয়ে এগোবেন বলে জানান ইমরান খান। সম্প্রতি সেই তথ্যপ্রমাণ তাদের হাতে তুলে দিয়েছে ভারত সরকার।

Bootstrap Image Preview