দণ্ডিত অনেক অপরাধী শর্তসাপেক্ষে এখন থেকে জেলের ঘানি না টেনে মুক্ত জীবন যাপন করার সুযোগ পাবেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ফেব্রুয়ারি মাসে কারাগারের ওপর চাপ কমানো এবং ‘সংশোধনমূলক’ সাজার নীতি কার্যকর করায় ১৯৬০ সালের অব্যবহৃত আইন 'দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স' কার্যকর করতে বিচারকদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন।
আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের (সবাই বিচারপতি) একটি সংস্কার কমিটির সুপারিশে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান।
এছাড়া তিনি আরো জানিয়েছেন, নারী নির্যাতন দমন , চুয়াত্তরের বিশেষ ক্ষমতা আইনে দণ্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে না।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনটি কার্যকর করতে সারা দেশের বিচারকদের নির্দেশনা দিয়ে গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি পরিপত্র জারি করেছেন। মূলত, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৬০ সালের আইনটি কার্যত কাগুজে আইন হিসেবে বহাল থাকলেও কার্যকারিতা কখনো ছিল না বললেই চলে।
সুপ্রিম কোর্টের পরিপত্র বলা হয়েছে, ‘প্রবেশন মঞ্জুর করার সময় সংশ্লিষ্ট বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেটকে আদালতে প্রবেশন অফিসারের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এই আইন অনুযায়ী কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা না হলে আদালত তার যুক্তিসংগত কারণ লিপিবদ্ধ করবেন।’
'দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স' আইনটির ১৯৬০ এর ৪ ধারার উল্লেখ্যক আছে, পূর্বে দণ্ডিত হয়নি এমন কোনো অপরাধী অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের জন্য দণ্ডিত হলে আদালত অপরাধীর বয়স, স্বভাব-চরিত্র, প্রাক-পরিচয় অথবা শারীরিক বা মানসিক অবস্থা এবং অপরাধের ধরণ অথবা অপরাধ সংঘটনে শাস্তি লাঘবকারী পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক যদি মনে করেন যে দণ্ড প্রদান অসমীচীন এবং প্রবেশনের আদেশ প্রদান করা যথাযথ নয়, তাহলে আদালত কারণ লিপিবদ্ধ করে সতর্ক করে অপরাধীকে অব্যাহতি দিতে পারেন অথবা উপযুক্ত মনে করলে আদেশে বিবৃত সময় হতে এক বছর সময়ের মধ্যে কোনো অপরাধ না করার এবং সদাচারণে থাকার শর্তে জামিনদারসহ বা জামিনদার ছাড়া মুচলেকা প্রদানে বিমুক্ত হওয়ার আদেশ দিতে পারেন।
কিন্তু ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে এই আইন কিভাবে প্রয়োগ হবে এবং আর যদি এই আইনের বিশেষ সুবিধা নিয়ে কোনো বিশেষ মহল কোনো ফায়দা নিতে চায় তাহলে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে ?
এমন প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ব্যারিস্টার সাইফুর রহমান বলেন, এই আইনের ৬ নং ধারায় উল্লেখ্য আছে আদালত যুক্তিযুক্ত মনে করলে অপরাধী কর্তৃক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের এবং মামলার খরচ পরিশোধের মাধ্যমে অপরাধীদের অবমুক্ত করা হবে।
কিন্তু দেশে এই আইনের প্রয়োগ প্রথম হওয়ার কারণে বিচারকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে এবং বারকাউন্সিলে সদস্যের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্কুলারের কোনো নির্দেশাবলি অনুসরণে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে বা বিচারক ও ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ওই আইন প্রতিপালনে অনীহা বা গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টর নজরে আনার জন্য স্থানীয় নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষকে বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে আগেই।