গ্যাস সংকট দূর এবং সরবরাহ নির্বিঘ্ন করতে চট্টগ্রামে পাইপ লাইন সংস্কারের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিভিশন কোম্পানী (কে জি ডি সি এল’র) প্রকৌশলীরা।
বিগত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রাম নগরে ও আশেপাশের এলাকায় শিল্প কারখানা, হোটেল রেস্টুরেন্টসহ বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংকট ও সরবরাহে বিঘ্নতা ঘটে আসছে। এতে কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি রান্নাবান্নায়ও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। যার ফলে কতৃপক্ষ এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কে জি ডি সি এল) সূত্র জানা যায়, এল এন জি থেকে চট্টগ্রামে দৈনিক সর্বোচ্চ ৩৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে। এতে চট্টগ্রামের চাহিদা মিটছে, পাশাপাশি জাতীয় গ্রিডের দৈনিক ২১০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস সাশ্রয় হচ্ছে। ১২০ থেকে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট এল এন জি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে, যা ঢাকাসহ অন্য অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও কেন গ্যাস সংকট?
কে জি ডি সি এল এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম নগরে ও আশেপাশের এলাকায় গ্যাস সংকটের একমাত্র কারণ পাইপলাইন। গ্যাসের পাইপলাইন সরু হওয়ার কারণে গ্রাহকদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ফলে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় গ্যাস সংকট দেখা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ এল এন জি (তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস) যুগে প্রবেশ করে ২০১৮ সালের আগস্টে। এল এন জি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে গ্যাস সংকট কেটে যাবে, এমনটাই আশা করেছিলেন গ্রাহকরা। এল এন জি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পরও নগরের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট কাটছে না।
বিশেষ করে নগরীর কাজির দেউরি, মাদারবাড়ি, চকবাজার, জামালখান, পাহাড়তলী, হালিশহর, পাথরঘাটা, পতেঙ্গা এলাকায় গ্যাসের সংকট অনেকদিন ধরেই চলছে। দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ কম থাকে। মাঝে মধ্যে একদমই থাকে না বলে অভিযোগ গ্রাহকদের।
এছাড়াও কোতোয়ালী, আসাদগঞ্জ, আসকার দীঘি এবং বহদ্দারহাটের কিছু এলাকায় প্রায় সময় দিনের বেলায় গ্যাস থাকে না বলে অভিযোগ।
হালিশহর বি-ব্লকের বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম বলেন, প্রায় সময় দিনের বেলায় বাসা বাড়িতে গ্যাস থাকেনা। মাঝে-মধ্যে গ্যাসের চাপ কম থাকে আবার কোনো সময় একেবারে থাকে না। এতে ভোগান্তি লেগেই আছে।
কে জি ডি সি এল এর প্রকৌশল সার্ভিসের মহা ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সরোয়ার হোসাইন বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে। এরপরও বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকটের কারণ হলো পাইপলাইনের সমস্যা। গ্যাসের পাইপ লাইনগুলোকে ব্যালেন্সিং এবং লাইনগুলোকে ইন্টারলিংক করতে হবে। ইন্টারলিংক করার পর গ্যাসের চাপ বাড়াতে হবে। তা হলে ওইসব এলাকায় সরবরাহ নির্বিঘ্ন হবে আর গ্যাস সংকট থাকবে না।
কে জি ডি সি এল এর মহাব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক বলেন, যে কয়েকটি এলাকায় গ্যাসের লাইনে সমস্যা আছে সেগুলোর সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলে খুব শিগগির এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন গ্রাহকরা।
কে জি ডি সি এলর মহাব্যবস্থাপক ও প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আ ন ম ছালেহ বলেন, পাইপ লাইনের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের বিশাল অংশে গ্যাস সংকট আগামি মে মাস থেকে কমে যাবে। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য পাইপ লাইনের সংস্কার কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, যে সব এলাকায় এখন গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে সেটি শুধুমাত্র পাইপ লাইন সমস্যার কারণে। আমরা এখন ওইসব এলাকায় নতুন পাইপ কাজ করছি। আবার অনেক এলাকায় নতুন লাইন বসছে। অবশিষ্ট এলকায় শিঘ্রই কাজ শুরু হবে।
তিনি আরও বলেন কালুরঘাট থেকে নতুন ব্রীজ পর্যন্ত ৮ কি:মি: ১০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ লাইন বসানো হয়েছে। অপরদিকে, ক্যান্টনমেন্ট থেকে ২ নং গেইট পর্যন্ত ৪ কি:মি: নতুন লাইন বসছে।