Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ০১ বৃহস্পতিবার, মে ২০২৫ | ১৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

অল্পসংখ্যক মুসলিমের জন্য নিরীহ মুসলিমরা শাস্তি পায়: তসলিমা নাসরিন

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৯, ১০:৫০ PM
আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৯, ১০:৫০ PM

bdmorning Image Preview


অল্পসংখ্যক মুসলিমের জন্য নিরীহ মুসলিমরা শাস্তি পায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশি বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।

রবিবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি স্ট্যাটাসে এ মন্তব্য করেন তিনি।

স্ট্যাটাসটি বিডিমর্নিং পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

সারা মুসলিম বিশ্ব কেঁপে উঠেছে নিউজিল্যান্ডের মসজিদে সন্ত্রাসী ঘটনার খবর শুনে। মুসলিমদের ওপর মানুষের এমনিতে অনেক রাগ, কারণ মুসলিমরা বিশ্বজুড়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসী কাণ্ড ঘটায়। শত শত মানুষের মৃত্যু ঘটে, শত শত মেয়ে ধর্ষিতা হয়। সে কারণে কিছু মুসলিমবিদ্বেষী লোক সুযোগ পেলে মুসলিমদের অপমান, নির্যাতন করতে ছাড়ে না। মসজিদে সন্ত্রাসী আক্রমণ মুসলিমদের প্রতি সেই ঘৃণারই বহিঃপ্রকাশ।

মসজিদে হামলা অবশ্য নতুন কিছু নয়। সুন্নি সন্ত্রাসীরা শিয়াদের মসজিদে বা আহমদিয়াদের মসজিদে প্রায়ই হামলা চালায়।

নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসীটি উগ্র ডানপন্থী, বর্ণবাদী, সাদা নয় এমন মানুষদের, বিশেষ করে অভিবাসীদের ঘৃণা করে। নরওয়ের বর্ণবাদী সন্ত্রাসী এন্ডারস ব্রেইভিকের মতো। মুসলিমদের প্রতি ঘৃণাটা তাদের একটু বেশিই।

মুসলিমবিদ্বেষীরা ভেবে নিয়েছে সব মুসলিমই সন্ত্রাসী, সুতরাং একটি মুসলিমকে হত্যা করা মানে একটি সন্ত্রাসীকে হত্যা করা। ঘৃণা এদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে দখল করে আছে যে সামান্য এইটুকু ভাবনা ওতে ঠাঁই পায় না যে অধিকাংশ মুসলমানই সন্ত্রাসী নয়। জগতের কত সহস্র নিরীহ নিরপরাধ মুসলিমকে শাস্তি পেতে হয় অল্পসংখ্যক মুসলিমের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য!

মানবতা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বলে মুসলিমরা যেভাবে একজোট হয়ে হাহাকার করছে, ঠিক সেভাবেই কেন তারা হাহাকার করে না যখন মুসলিম সন্ত্রাসীদের হাতে অমুসলিমরা বা ইসলামে অবিশ্বাসীরা মরে? তাহলে কি এটাই ঠিক যে মুসলিমরা মারা গেলে তারা যতটা দুঃখ পায়, অমুসলিমরা মারা গেলে ততটা পায় না? মুসলিম বিদ্বেষীদের দেখেছি, মুসলিম মরলে ওরা দুঃখ তো পায়ই না, বরং খুশি হয়। এ অনেকটা আবার তেমনই হয়ে গেল না তো!

শুধু আমার পরিবারের বা আমার সম্প্রদায়ের লোক মরলে আমি কাঁদবো, অন্য কেউ মরলে আমার কিছু যায় আসে না, এ কোনো ভালো মানুষের কথা নয়।

মানুষের শ্রদ্ধা ভালোবাসা দীর্ঘকাল পেতে হলে মুসলিমদের শুধু 'সন্ত্রাসী নই'--এই ট্যাগই যথেষ্ট নয়, মুসলিমদের প্রতি যেমন, অমুসলিমদের প্রতিও তাদের সহানুভূতি থাকতে হবে।

মুসলিমরা অমুসলিমদের দেশে যতটা স্বাধীনতা, সহযোগিতা, সম্মান পায়, ততটা কোনও মুসলিম দেশে পায় না। তাই যত ধর্মান্ধই হোক, তারা অমুসলিমদের দেশে বাস করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে।

সারা পৃথিবীর অমুসলিম লোক যেভাবে নিউজিল্যান্ডের নিরীহ মুসলিমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছে, যেভাবে সমব্যাথী হচ্ছে, মুসলিমদেরও এ থেকে শেখা উচিত। অমুসলিমদের নৃশংস মৃত্যু হলে মুসলিমদেরও এভাবে শোক প্রকাশ করা উচিত, এভাবে সমব্যাথী হওয়া উচিত।

যারা মুসলানদের সন্ত্রাসী হওয়ার পেছনে আমেরিকা আর ইজরাইলের কার্যকলাপকে দোষ দেয়, তারা কি এখন নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী লোকটির মসজিদে ঢুকে মুসলানদের হত্যা করার পেছনে, আইসিস, আল কায়দা বা বোকো হারামের কার্যকলাপকে দোষ দিচ্ছে? যদি না দেয়, তাহলে নিশ্চয়ই কোথাও কোনো গণ্ডগোল আছে।

মুসলিমদের শুধু শিশু হলে চলবে না, এবার সময় হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কের মতো আচরণ করার, দায়িত্ববান হওয়ার। 'আমার ধর্ম নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার ধর্ম গ্রন্থ নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার বিশ্বাস নিয়ে কথা বলা চলবে না, রাস্তা ব্লক করে লোকের অসুবিধে করে আমি যে নামাজ পড়ি, তা নিয়ে কোনো কথা বলা চলবে না, আমার শরিয়া আইন নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার হিজাব বোরখা নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার খাবার নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার পশু-জবাই নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার সমাজের নারী-পুরুষ বৈষম্য নিয়ে কথা বলা চলবে না, আমার অনুভূতিতে কারও আঘাত দেয়া চলবে না, আমার নবী নিয়ে কিছু উচ্চারণ করা চলবে না, নবীর স্কেচ আঁকা চলবে না, তাহলে মেরে ফেলবো, আগুন জ্বালিয়ে দেবো, দুনিয়া ধংস করে ফেলবো'... শিশুর মতো আবদার আর অসভ্যের মতো আচরণ! সভ্য হতে চাইলে শুধু নিজের নয়, পৃথিবীর সবার-- সব ধর্মের, সব বিশ্বাসের, সব বর্ণের, সব লিঙ্গের, সব ভাষার মানুষের মানবাধিকারে, তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারে, তাদের মত প্রকাশের অধিকারে বিশ্বাস করতে হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে বন্দুকধারীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ৫০ জন মারা যান। আহত হয়েছেন অন্তত ৪৮ জন। এই সন্ত্রাসী হামলার সময় আল নূর মসজিদে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা। তারা মসজিদে ঢোকার কিছুক্ষণ আগে এক পথচারীর কাছ থেকে খবর পেয়ে ফিরে আসেন। ফলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান ক্রিকেটাররা।

Bootstrap Image Preview