এক বছর আগেও রিকশা চালিয়ে সংসার চালাত টেকনাফের নাজিরপাড়ার এজাহার মিয়া (৭০)। তার ছেলেরা শ্রমিকের কাজ করত। কিন্তু তার পরেও সংসারে স্বচ্ছলতা ছিল না। এক সময় তিন বাপছেলে মিলে শুরু করেন ইয়াবা ব্যাবসা। ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে তাদের জীবন। একপর্যায়ে দেশব্যাপী তৈরি করেন ইয়াবার বড় নেটওয়ার্ক। সেই গোলাপি বড়ির কল্যাণে ১ বছরেই কোটিপতি বনে যান এজাহার মিয়া (৭০) এবং তার দুই ছেলে।
জানা যায়, এজাহার মিয়া ও তার দুই ছেলে আটটি ব্যাংক ও চারটি মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের মাধ্যমে ১৮২টি হিসাব নম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদক বিক্রির অর্থ সংগ্রহ করতেন। এ অর্থে তারা নির্মাণ করেছেন দুটি বিলাসবহুল বাড়ি। কক্সবাজার শহর ও টেকনাফে নয় স্থানে জমি কিনেছেন। মাদকের অর্থ দিয়ে বিলাসী জীবনযাপন করতেন তারা।
২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট এ চক্রের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয় টেকনাফ মডেল থানায়। এরই মধ্যে ওই মামলার তদন্ত শেষ করেছে সিআইডি। সেখানে ইয়াবার কারবারে তিন বাপবেটার এ গ্রুপের ৬০ জনের নাম উঠে এসেছে। এজাহার ও তার দুই ছেলের প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ক্রোক করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। তবে তিন বাপবেটা জামিন নেওয়ার পর কোথায় রয়েছেন তা জানা যায়নি।
এ ব্যাপারে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ১ বছর আগে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার দুটি মাদক মামলার তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি এ চক্রের বিপুল সম্পদের খোঁজ পায়। এরপর মাদক মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়।
এই চক্রের বাকী সদস্যরা হলেন, কক্সবাজারের নাজিরপাড়ার নুরুল আলমের ছেলে জালাল উদ্দিন ও আবছার উদ্দীন, মো. বেলাল, জালিয়াপাড়ার মো. আরিফ, আবদুর রহমান, অলিয়াবাদের নুরুল মোস্তফা, ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ তৈয়ব, কলেজপাড়ার নুরুল কবিরের ছেলে রাশেদুল ইসলাম, হেলাল, মো. কামাল, মোহাম্মদ হাসান, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার আবদুল কাদেরের ছেলে মোজাহার আলম, কুলালপাড়ার মৃত আলী আহমদের ছেলে আবু তাহের, মিরপুর ১০ নম্বরের বাসিন্দা মো. হামিদ, নরসিংদীর বাঘাটার মৃত চান মিয়ার ছেলে মো. রাসেল, মুন্সীগঞ্জের উত্তর কাজী কসবার জাফর শেখের ছেলে রিয়াজ, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার মৃত রুস্তম আলীর ছেলে আবদুল কুদ্দুস, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দুর্গাপুরের সুমাইয়া আক্তার রানী, জামালপুরের তালাশের মনির হোসেনের ছেলে নাঈম হোসেন, কুমিল্লার মুরাদনগরের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে মো. শাহজালাল, গাজীপুরের টঙ্গীর সোহেল আহমেদ, ঢাকার পল্লবীর আবদুর রহিম জনি, পশ্চিম শেওড়াপাড়ার মো. স্বপন, চাঁদপুর সদরের আফজাল হোসেনের ছেলে সালাউদ্দিন, মধ্য বাড্ডার গোলাম ফারুক, নরসিংদী সদরের মধ্যনগর এলাকার বজলুর রহমানের ছেলে রায়হান খান, মধ্য বাড্ডার আফরোজা আক্তার এ্যানী প্রমুখ।