পুরান ঢাকায় নিরাপদ সড়কের আন্দোলন চলাকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর ওপর গাড়ি তুলে দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন।
বুধবার দুপুর দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত দুই ছাত্রী হলেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের (১০ম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ইমা আক্তার ও একই বিভাগের (১৪তম ব্যাচ) আয়েশা মোমেনা।
আহত দুই ছাত্রীর একজনকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ও পরে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন কর্মসূচি শেষ করে ক্যাম্পাস ফিরতে থাকেন। এ সময় প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেনের গাড়ি (ঢাকা মেট্রো গ-১৭-৯৫৬৩) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমা আক্তার ও আয়েশা মোমেনাকে ধাক্কা দেয়।
গাড়ির ধাক্কায় ইমা আক্তার ছিটকে পড়েন। কিন্তু আয়েশা মোমেনা গাড়ির ধাক্কায় গাড়ির সামনে পড়লেও আবার তার পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ির চাকা তুলে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় ওই শিক্ষক নতুন গাড়ি কিনে নিজে চালাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য শিক্ষার্থীরা গাড়িটি আটক করে আহত আয়শাকে শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে নেয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গাড়িটি ভাঙচুর করে। পরে গাড়ি ভাঙচুর থামালে শিক্ষক গাড়িটি নিয়ে চলে যান। পরে আয়েশাকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সযোগে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল ও পরে অ্যাপালো হাসপাতালে নেয়া হয়।
আহত অপর শিক্ষার্থী ইমা আক্তার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা দুই জন ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার সময় একটি প্রাইভেট কার আমাদের ধাক্কা দেয়। আমি দুরে ছিটকে পরলেও আয়েশার ওপর পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চলে যায়। পরে আহত আয়েশাকে ওই শিক্ষকের গাড়িতে নিতে চাইলে তিনি রাজি হননি।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থী আয়েশাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল থেকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আয়েশার চিকিৎসার দায়িত্ব শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে আইন বিভাগের শিক্ষক মোফাজ্জল হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্রেক কাজ না করার জন্য দুর্ঘটনাটা ঘটে। আমি আহত শিক্ষার্থীর সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি। আর আমি তাকে গাড়িতে নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিছু শিক্ষার্থীর ভুল বোঝাবুঝির কারণে আমার গাড়িতে হামলা চালায়।’
প্রসঙ্গত, রাজধানীর প্রগতি সরণিতে বাসচাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বুধবার সকাল ৯টা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন। এ সময় তারা প্রগতি সরণির ঘটনায় জড়িত বাসচালকের শাস্তি, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে স্পিড ব্রেকার নির্মাণসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ডাবল ট্রিপ চালু, প্রধান ফটকের সামনে ফুটওভার ব্রিজ ও স্পিড ব্রেকার নির্মাণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটক থেকে লেগুনা স্ট্যান্ড তুলে দেয়ার দাবি জানান। দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শেষ করেন। এদিকে দুপুর ২টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের গাড়ির ধাক্কায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী আহত হন। আহত এক শিক্ষার্থীকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেয়া হয়।