Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১৭ শনিবার, মে ২০২৫ | ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

ফেসবুক ‘বন্ধু’র পাঠানো উপহার পেতে ৯০ লাখ টাকা খোয়ালেন নারী

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৬ মার্চ ২০১৯, ০৬:৪৮ PM
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৯, ০৬:৪৮ PM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ছেলে থাকেন ভারতের পুণেতে। মেয়েও কর্মসূত্রে গুরুগ্রামে থাকেন। মেয়ের স্বামী ভারতের প্রথম সারির বেসরকারি একটি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা। কিন্তু, বছর দুয়েক আগে অবসরের কয়েক মাস পরেই তিনি মারা যান। তার পর থেকে গড়িয়াহাটে একটি অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন ৫১ বছর বয়সী বিশাখা চট্টোপাধ্যায় ( ছদ্ম নাম)।

২০১৭ সালের এপ্রিলে ফেসবুকে নিজের নামে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেন বিশাখা। পরে সেখানেই এক ব্যক্তির সঙ্গে তার আলাপ হয়। কিন্তু, সেই আলাপেই যে তার ৯০ লাখ টাকা খোয়া যাবে, তা ঘূর্ণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি তিনি! চলতি বছরের ২৩ মার্চ কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ থানায় অভিযোগ করেছেন ওই নারী।

অভিযোগে বিশাখা দাবি করেন,  চলতি বছরের গোড়ার দিকে ফেসবুকে মণিশ কুমার নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার আলাপ হয়। মণিশ কুমার নিজেকে ইংল্যাণ্ডের বাসিন্দা বলে পরিচয় দেন। বলেছিলেন, তিনি একজন পাইলট। ফেসবুক ছেড়ে আলাপচারিতা গড়ায় হোয়াটসঅ্যাপেও।

অভিযোগ উঠেছে, সেই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই মণিশ কুমার এক দিন বিশাখাকে জানান, তিনি কিছু প্রসাধন সামগ্রী পার্সেল করে পাঠিয়েছেন উপহার হিসেবে। মণিশ ওই নারীকে একটি বেসরকারি ভারতীয় ব্যাংকের জয়পুর শাখায় সেলিম খানের অ্যাকাউন্টে ৪৫ হাজার টাকা জমা করতে বলেন। ওই পার্সেল ছাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় শুল্ক হিসেবেই ওই টাকা জমা করতে বলা হয়।

পুলিশের কাছে বিশাখা দাবি করেন, গত ৮ মার্চ সেই টাকা জমা করে দেন তিনি। এর পরে মণীশ আবারো তাকে জানান, আসলে ওই পার্সেলে প্রসাধন সামগ্রী নয়, আছে প্রায় ৭০ হাজার ডলার মূল্যের গয়না। ভারতীয় মুদ্রায় যা ৪৮ লাখেরও বেশি। মণীশ ওই নারীকে জানান, পার্সেলে থাকা গয়নার খোঁজ পেয়ে গেছেন শুল্ক দপ্তরের কর্মকর্তারা। তাই স্থানীয় এজেন্টের মাধ্যমে টাকা দিতে হবে ওই পার্সেল ছাড়াতে।

কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানার তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গেছে, মণিশের কথা বিশ্বাস করে পরবর্তী দু’সপ্তাহে দফায় দফায় সাড়ে ৮৯ লাখ টাকা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ১১টি আলাদা আলাদা ব্যাংকে জমা করেন ওই নারী। তার পরেও পার্সেল না আসায় তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারিত হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রতারকরা পুরো বিষয়টি আরো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে ব্যাংক অব আমেরিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ফোন এবং ইমেইলও করে।

তদন্তে নেমে পুলিশ এখন পর্যন্ত ১১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন যেখানে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি মিলেছে দু’টি ফোন নম্বর, যে নম্বর থেকে ব্যাংক অব আমেরিকার প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে ফোন করা হয়।

এর আগে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা এক যুবকও ঠিক একইভাবে ফেসবুকে পরিচয় হওয়া ‘ব্রিটিশ বান্ধবীর’ ফাঁদে পা দিয়ে ২০ লাখ টাকা খুইয়েছিলেন। সেই মামলার তদন্ত করে কলকাতা পুলিশের ব্যাংক জালিয়াতি দমন শাখা। তারা দিল্লি থেকে নাইজেরীয় জালিয়াতদের একটি দলকে ধরেও ফেলেছিল। কিন্তু প্রতারণার টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। 

তদন্তকারীদের অভিজ্ঞতা, এ ধরনের প্রতারণার পিছনে থাকে নাইজেরীয় জালিয়াতরা। অ্যাকাউন্টগুলো ভাড়া নেওয়া হয়। টাকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছোট অঙ্কে ওই টাকা আবার চলে যায় অন্য অ্যাকাউন্টে। তাই ওই অ্যাকাউন্টের মালিকদের হদিশ পেয়েও খুব একটা লাভ হয় না। তদন্তকারীদের দাবি, প্রতারণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই জালিয়াতরা টাকা নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দেয়। তাই টাকা উদ্ধারের সম্ভাবনা কমে যায়।

একই ধরনের পর পর ঘটে যাওয়া কয়েকটি অপরাধের ঘটনা থেকে তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, জালিয়াতরা সোশ্যাল সাইটে ওই নারীর মতো ‘একাকী’ মানুষদেরই বন্ধুত্বের টোপ দেয়। কারণ দক্ষিণ কলকাতার যে যুবক একইভাবে প্রতারিত হয়েছিলেন তিনিও বিবাহ বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তাই সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ফেসবুকের মতো সোশ্যাল সাইটে নিজের সম্পর্কে বেশি তথ্য না দেওয়াই ভালো এবং মনে রাখা উচিত ভার্চুয়াল জগতে ভুয়া পরিচয়ে প্রোফাইল তৈরি করা কোনো কঠিন বিষয় নয়।

Bootstrap Image Preview