বনানীর এফ আর টাওয়ারে লাগা আগুনে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। শ্রীলঙ্কান এক নাগরিকসহ ৭ জনের লাশ উদ্ধারের পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে ওই ভবনের ১০ তলার একটি কক্ষ থেকে আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সব মিলে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২১ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, ভবনের ভেতর আরও লাশ পড়ে আছে। তবে কতজন থাকতে পারেন তা সঠিকভাবে বলতে পারছেন না তারা। তবে ধারণা করছেন,ভেতরে যারা থাকতে পারেন তারা মৃত।
ওই কর্মকর্তা বলেন, সন্ধ্যা ৭টায় আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন ভেতরে সার্চিং শুরু করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দেবাশিষ বর্ধন জানিয়েছেন, আগুন লাগার পর তাৎক্ষণিকভাবে বাঁচার জন্য ছোটাছুটি করেছিল শত শত মানুষ। কেউ ফোন করে সাহায্য চাচ্ছিলেন, কেউ ভয়ে ভবন থেকে লাফিয়ে পড়েছে, কেউ আবার নিরাপদ আশ্রয় ভেবে ভবনের বাথরুমেও লুকিয়ে পড়ছিল। কিন্ত সেখান থেকে সার্চিং অপারেশনের সময় কয়েক জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা জীবন বাজি রেখে চেষ্টা করেছি আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে। একই সাথে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে। অনেক মানুষকে আমরা ভবন থেকে বের করে এনেছি। কিন্ত দুঃখের বিষয় অনেকের জীবন রক্ষা হয়নি। আগুন নেভাতে আমাদের ২৫টি ইউনিটের ৫০০ সদস্য কাজ করেছে। আগুন নির্বাপনের পর এখনো চলছে সার্চিং অপারেশন।’
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ভয়ে চারজন লাফ দিয়ে পড়ে মারা গেছে। আবার অনেকে বাথরুমে লুকিয়ে ছিল। তারা তো আর বাচতে পারেনি।’
সর্বশেষ ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া হয় ৪ জনকে, এরমধ্যে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন ২ জনকে। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া হয় ৪২ জনকে, এরমধ্যে এক শ্রীলংকার নাগরিককে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এছাড়া ইউনাইটেড হাসপাতালে আহত অবস্থায় নেওয়া হয় ৫ জনকে, এরমধ্যে মৃত ঘোষণা করা হয় ৩ জনকে। ফায়ার সার্ভিসের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী মোট নিহতের সংখ্যা ১৯ জন। এছাড়া চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৭০ জন।
সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক (ডিডি) দিলীপ কুমার ঘোষ জানান, এ ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনজন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে দুজন, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন এবং ঘটনাস্থলে ১৩ জন মারা গেছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭০ জন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অ্যাপোলো হাসপাতালে মারা গেছেন আমেনা এবং বনানী ক্লিনিকে মারা গেছেন পারভেজ সাজ্জাদ নামে আরও দুজন। এই হিসাবে মোট মৃতের সংখা দাঁড়ায় ২১ জনে।
এদিন বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনজনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে আব্দুল্লাহ আল ফারুক নামে এক ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, আব্দুল্লাহ আল ফারুকের শরীরের শতকরা ৯০ ভাগ পুড়ে গিয়েছিল। এছাড়া আবু হোসেন ও রেজাউল আহমেদ নামে দুইজনকে হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আব্দুল আহাদ নিহত ছয়জনের পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন- পারভেজ সাজ্জাদ (৪৭), মামুন (৩৬), আমিনা ইয়াসমিন (৪০), আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৩২), মনির (৫০) ও মাকসুদুর (৩৬)।
জানা গেছে, ঢামেকে নিহত ব্যক্তির নাম আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং কুর্মিটোলায় নিহতের নাম নিরস ভিগ্নে রাজা (৪০)। কুর্মিটোলায় নিহত রাজা শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং স্কেন ওয়েল লজিস্টিকসের ম্যানেজার পদে কর্মরত ছিলেন। তবে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিহত তিনজনের নাম-পরিচয় জানা যায়নি।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে যে ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করেছেন চিকিৎসকরা, তার নাম নিরেশ ভিগ্নে রাজা। বয়স প্রায় ৩৫ বছর। তার বাড়ি শ্রীলংকায়। ভবনটির ১০ তলায় স্ক্যানয়েল লজিস্টিকস বাংলাদেশ নামে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট অফিসে চাকরি করতেন তিনি। সূত্র জানিয়েছে, আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে মারা গেছেন নিরেশ।