ছেলের জীবন বাঁচাতে নিজের একটি কিডনী দিয়ে দিতে প্রস্তুত মা। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কি করে? কিডনী প্রতিস্থাপনের মত টাকাটাও যে তাদের নেই!
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের কচুবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাহেদা খাতুন (৪৭)। স্বামী আব্দুল মাজেদ মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর আগে। এরপর কৃষি কাজ করে কোনরকম ২ মেয়ে ও ২ ছেলেকে বড় করেছেন। এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে এক মেয়ে মারাও গেছে। বাকী ছেলে-মেয়েদের বিয়েও দিয়েছেন। তবে তার জীবন সংগ্রাম থেমে নেই। এখনো কৃষি কাজ করেই সংসারে সহযোগিতা করেন তিনি।
টানাপোড়েনের মধ্যেই বড় ছেলে ফিরোজ আহমেদের কিডনি সমস্যা ধরা পড়েছে। তার দুটি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা ইউরোলজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফিরোজ আহমেদের সংসারে তিন ছেলে। সবচেয়ে ছোট ছেলের বয়স ৬ মাস। বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। মেজো ছেলের বয়স ২ বছর। ছোট ছেলেটার জন্মের পর থেকেই তিনি অসুস্থ।
ফিরোজ আহমেদের চাচাতো ভাই বকশু মিয়া জানান, তিনি (ফিরোজ আহমেদ) দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। প্রায় ৫ থেকে ৬ মাস আগে তার কিডনি সমস্যা ধরে পড়ে।
ছোট ভাই সাগরে মাছ ধরার কাজ করেন। আর বড় বোনের স্বামী-সন্তান নিয়ে টানাপোড়েনের সংসার। জাহেদা খাতুনের নিজের তেমন জায়গা-জমিও নেই। আর্থিক অবস্থাও খুব একটা স্বচ্ছল না। তবে অসুস্থ ছেলেকে বাঁচাতে মরিয়া জাহেদা খাতুন। এমতবস্থায় ছেলেকে একটি কিডনি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।
এজন্য পুলিশ সুপারের কাছে গত সোমবার (১ এপ্রিল) লিখিত আবেদনও জানিয়েছেন তিনি। সেই আবেদনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পোস্ট করছেন।
ফেসবুক পোস্টে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শের আলী লিখেছেন, কিছু কিছু সন্তানের মস্ত বড় ফ্ল্যাটে মাকে রাখার জায়গা হয় না। অথচ মায়ের ছোট্ট পেটের ভেতরেই সন্তানকে রাখার জায়গা হয়ে আসছে সৃষ্টিলগ্ন থেকেই। বৃদ্ধ বয়সে এসেও নিজের পেটের ভেতরের একটি কিডনি প্রদান করে পেটের সন্তানকে বাঁচাতে চান এই মা। সকল মাকে সহস্র স্যালুট।’
পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, এরকম একটা আবেদন এসেছে। নীতিমালা অনুযায়ী কেউ কিডনি দিতে চাইলে নিকটাত্মীয় হতে হয়। সেদিক থেকে একটা পুলিশ ভেরিফেকশন কপি লাগে। আমরা আবেদনটি সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়েছি। যদি তিনি নিজে অথবা পরিবারের কেউ তাকে কিডনি দিতে চান তাতে অনুমতি পাবেন।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সজীব কুমার দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের কাছে আবেদনটি এসেছে, আমরা সত্যায়ন করে দিয়েছি।
সন্তানের জন্য মা জাহেদা খাতুনের নিরন্তর এই সংগ্রামের প্রশংসা করছেন অনেকেই। তবে অনুমতি পেলেও কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ নিয়ে চিন্তিত মা জাহেদা বেগম।
বকশু মিয়া বলেন, আবেদন পত্রে আমার মোবাইল নম্বর দেয়া। অনেকেই আমার কাছে ফোন করছেন। নানা কথা বলছেন। কিন্তু কেউ যদি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন তাহলে হয়তো তার চিকিৎসা করানো সম্ভব হতো। অর্থাভাবে এখনো কোন হাসপাতালে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হবে তাও নিশ্চিত করা হয়নি বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কিডনি প্রতিস্থাপনে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ হয়। আবার সরকারি হাসপাতালগুলোতেও এ খরচ দেড় থেকে ৩ লাখ টাকা।