ঢাকা শহরকে বাস উপযোগী, ঝুঁকিমুক্ত আধুনিক একটি নগরীতে পরিণত করার জন্য যেখানে যা যা করা দরকার আমরা সে পদক্ষেপ গ্রহণ করছি বলে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম এমপি বলেছেন, আমরা ঢাকা মহানগরীকে একটা মৃত্যুকূপে পরিণত হতে দিতে পারিনা। কিছু অর্থলিপ্সু মানুষের লোভের কারণে মানুষের জীবন চলে যাবে, তাদের পরিবার অসহায় হয়ে পড়বে, এতো বড় ক্ষতি আমরা হতে দিতে পারি না।
শনিবার(৬ এপ্রিল) সকালে ঢাকার সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘ইমারত নির্মাণে সরকারের দায়িত্ব ও নাগরিকদের করণীয়’ বিষয়ে ‘মিট দ্যা প্রেস’ অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রবাহ বাংলাদেশের উন্নয়নকে স্তিমিত করে দিয়েছিলো। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ২১ বছর আন্দোলন-সংগ্রাম করে বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের জায়গায় ফিরিয়ে এনেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা, বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলহত্যাসহ অন্যান্য অপরাধের বিচার করার ব্যবস্থা করেছেন। শেখ হাসিনা বিচার করে দেখিয়েছেন কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়।
এসময় তিনি বলেন, পুরনো ঢাকার অপরিকল্পিত ভবন রাতারাতি ভেঙ্গে নতুন কিছু করা সম্ভব হয়নি। আমরা সেখানে রি-ডেভেলপমেন্টের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আমরা পুরনো বিল্ডিং ভেঙ্গে মানসম্মত, পরিবেশসম্মত, বিল্ডিং কোড মেনে নতুন বিল্ডিং করে দেবো। যাতে পুরনো ঢাকায় জীবন ঝুঁকিপূর্ণ না থাকে। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও নির্দেশনা রয়েছে’।
বনানীর এফ আর টাওয়ারের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় তিন শ্রেণীর মানুষ জড়িত বলে রেজাউল করিম এমপি আরো বলেন, লোভী মালিক, লোভী ডেভেলপার এবং এই ডেভেলপমেন্ট কাজ দেখভাল করার যাদের দায়িত্ব ছিলো অর্থাৎ রাজউকের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা, পরিদর্শক, অথরাইজড অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে। আরেকটি বিষয় ছিলো অপরাধের চিহ্ন পাওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেয়া। ২০০৭ সালে এফ এর টাওয়ারের অবৈধ অংশের রিপোর্ট আসার পরও রাজউক এর চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যরা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি। কেনো সেটা তারা করেননি অথবা পরবর্তী সময়ে কেনো এ বিষয়টি কারো দৃষ্টিগোচরে আসলো না, সেটা খতিয়ে দেখার জন্য আমরা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি’।
ইমারত নির্মাণের সঙ্গে যারা জড়িত শুধু তারা নয়, এ নির্মাণ পরিদর্শন করার দায়িত্ব রাজউকের যাদের ছিলো তাদেরকেও সমান দায় নিতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাসে এ জাতীয় ঘটনায় অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি, এফ আর টাওয়ারের ঘটনায় আমরা মামলা করেছি। একাধিক আসামী গ্রেফতারও হয়েছে। আইনের শাসনের আওতায় অবহেলাকারীদের আনার এটি বাংলাদেশে প্রথম দৃষ্টান্ত’।
মন্ত্রী বলেন, ‘যে ভবনে শুধু অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই, তাদেরকে নির্ধারিত সময় দিয়ে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা সম্পৃক্ত করতে বলা হবে। যে বিল্ডিং এ জরুরী বহিগর্মন পথ নাই তাদেরকে নির্ধারিত সময়ে তা করতে হবে। যে ভবনে গ্যারেজের জায়গায় স্থাপনা করা হয়েছে তাদেরকে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে তা সরিয়ে ফেলতে হবে, যদি না করেন আমরা ব্যবস্থা নেবো। যারা অনুমোদন ছাড়া উর্ধ্ধমুখী ইমারত নির্মাণ করেছেন, তাদেরকে তা সরিয়ে নিতে হবে’।
পরিদর্শন ও তদন্ত রিপোর্ট এবং সকল অনিয়ম জাতীয় পত্রিকায় ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশ করবো উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘অভিযুক্ত অপরাধীদের স্বরূপ আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই’।
রাজউক বড় কর্মসূচি নিতে পারবে কিনা এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘র্যাংগস্ ভবনসহ প্রভাবশালীদের অনেক স্থাপনা ভাঙ্গা হয়েছে, সমস্যা হয়নি। শেখ হাসিনা সরকারের সিদ্ধান্ত, অপরাধ কে করেছেন সেটা দেখে বিচার হবে না, যেমনভাবে অনেক দুর্নীতিবাজের বিচার হয়েছে’।
রাজউকের আমূল পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘যার এলাকায় অবৈধ ইমারত নির্মাণ হচ্ছে তিনিই দায়ী হবেন। বিল্ডিং এর নম্বর দিয়ে পরিদর্শককে সাপ্তাহিক রিপোর্ট দিতে হবে। বেআইনী ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা অঙ্কুরেই আঘাত হানতে চাই’। সেক্ষেত্রে আইনী বাধার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রায় তিন হাজারের উর্ধ্ধে উচ্ছেদ প্রক্রিয়া হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত রয়েছে। এজন্য বলেছি, সুনির্দিষ্টভাবে নোটিশ ইস্যু করতে হবে। গণ নোটিশ ইস্যু করা যাবে না। যদি কেউ সুনির্দিষ্টভাবে ছাড়া নোটিশ ইস্যু করেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া, রাজউকে যোগ্য ও দক্ষ আইনজীবী নিয়োগের ব্যবস্থা নিয়েছি’।
এসব কাজ বাস্তবায়নে কোনো চাপের কাছে বাধাগ্রস্ত হবে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কোনো চাপ আমাকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। টানা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নাশকতা দেখছেন কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, এখন এ বিষয়টিও খতিয়ে দেখতে হবে, শুধুমাত্র শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে নাকি এর পেছনে অন্য কারণও আছে।
নতুন বিল্ডিং কোড আইন আগামী ২-১ সপ্তাহের মধ্যেই গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘২০১৭ সালের শেষদিকে আইনটি ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের আপত্তি ও আন্দোলনের মুখে একটা সমস্যা তৈরি হয়’।