Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১০ মঙ্গলবার, জুন ২০২৫ | ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

‘ঘুমাস নে মা চোখ খোলা রাখ’

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩৬ AM
আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩৬ AM

bdmorning Image Preview
সংগৃহীত ছবি


ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসার ছাত্রী যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন এই ছাত্রী। মেয়েকে নিয়ে এক অজানা আশঙ্কায় রয়েছেন তার পরিবার। শরীরে ৭০ শতাংশের বেশি পোড়া ক্ষত নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় সারাক্ষণ কাতরাচ্ছেন ছাত্রীটি।

রবিবার (৭ এপ্রিল) সকালে বাবা যায় মেয়েটিকে দেখতে। এ সময় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মেয়েকে দেখতে গিয়ে অজানা আশঙ্কায় তাকে চোখ বন্ধ না করার আকুতি জানান অসহায় বাবা। তিনি বলেন, ‘ঘুমাস নে মা চোখ খোলা রাখ।’

বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মেয়ের কাছে দুপুর ১টার দিকে যান অসহায় বাবা। আইসিইউ থেকে বেরিয়ে তিনি নানা কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমার মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে চেয়েছে, পানি খেতে চেয়েছে। চোখ বন্ধ করলে আদরের মেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই তিনি বলেন, ‘ঘুমাস নে মা। চোখ খোলা রাখ। জানি, তোর খুব কষ্ট হচ্ছে। তবু চোখ বন্ধ করিস না মা।’

তিনি আরো বলেন, তার মেয়ের কিছু হলে তিনি বাঁচবেন না। তার একমাত্র মেয়েটি খুব শান্ত আর মেধাবী। পড়াশোনায় সব সময় সে প্রথম হয়। দাখিল পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পেয়েছে। তিনি এখন তার মেয়েকে বাঁচাতে চান।

রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, তার যেন সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত হয়। দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, আমার মেয়েকে আপনারা বাঁচান। আল্লাহ যেন আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে রাখেন। ছাত্রীটির বাবা আরও বলেন, আমিও ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছি। আমার ছেলেমেয়েও পড়ছে। আগে এমন জানলে আমার মেয়েকে এ মাদ্রাসায় দিতাম না।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। মেয়ের জন্য তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চান। হাসপাতালের বারান্দায় ছাত্রীটির মায়ের পায়ের কাছে বসে বিলাপ করছিলেন তার দুই ভাই। মা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। অপরদিকে মেয়ের একটু স্বস্তির জন্য একবার মেয়ের কাছে আবার চিকিৎসকের কাছে ছুটছিলেন অসহায় বাবা।

এদিকে বাবাকে পেয়ে মেয়ে তার কাছে পানি পানের আকুতি জানায় মেয়ে। পানি দেয়া চিকিৎসকদের নিষেধ বলায় অনুনয় করে ছাত্রীটি বলেন, ‘বাবা আমার গলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে। চুরি করে হলেও দুই ফোঁটা পানি দাও বাবা।’

উল্লেখ্য, ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদরাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদরাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকা পরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা। তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।

এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।

Bootstrap Image Preview