বকেয়া বেতনসহ সাত দাবিতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের (বিআরডিবি) অফিসের সামনে অবস্থান নিয়েছে কমীরা।
বুধবার (১০ এপ্রিল) সাত দফা দাবি নিয়ে সারা দেশ থেকে প্রায় সাত হাজার কর্মচারী হাজির হন বিআরডিবি অফিসের সামনে। বিআরডিবি কর্মচারী সংসদ-সিবিএর অবস্থান কর্মসূচি ও মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচিতে যোগ দিতে তাঁরা কারওয়ান বাজারে জড়ো হন সকালেই।
বিআরডিবি বাস্তবায়নাধীন ১৫টি প্রকল্পের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ‘বঙ্গবন্ধু দারিদ্র্য দূরীকরণ ফাউন্ডেশন’ গঠনের প্রতিবাদে এবং বিআরডিবিকে ‘বঙ্গবন্ধু পল্লী উন্নয়ন অধিদপ্তরে’ রূপান্তরসহ সাত দফা দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচি ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
অন্য দাবিগুলো হলো আদালতের রায় অনুযায়ী বিআরডিবির বাস্তবায়নাধীন পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্প (পজীপ), পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি (পদাবিক), সমন্বিত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি (সদাবিক) ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান প্রকল্পসহ (পিইপি) সব প্রকল্পে কর্মরতদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর; কর্মচারীদের শতভাগ বেতন প্রদানসহ পর্যাপ্ত ঋণ তহবিল প্রদান ও একক ঋণ চালু; ফেনীর ফুলগাজীতে পদাবিক মাঠ সংগঠক আনোয়ারা বেগমের আত্মহত্যায় প্ররোচনাদানকারী কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; রাজস্ব খাতে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের দ্রুত পদোন্নতি ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী তৃতীয় শ্রেণিতে পদোন্নতি এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক, স্টেনো টাইপিস্ট, স্টেনোগ্রাফারদের দুটি বিশেষ ইনক্রিমেন্ট ও মহিলা উন্নয়ন অনুবিভাগে কর্মরতদের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় টাইম স্কেল প্রদান; সিবিএ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার এবং বিআরডিবি কর্মচারীদের সংশ্লিষ্ট সব কমিটিতে আগের মতো সিবিএ প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা।
অবস্থান কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিভাগের সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক খান সিরাজুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আজম খসরু, বিআরডিবি-সিবিএর কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, সম্পাদক মফিজুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক এ কে এম রফিকুল ইসলাম, লুবনা নাজনীন সুলতানা প্রমুখ। এ সময় সিবিএর জেলা কমিটির সদস্যরাসহ বিআরডিবির সহস্রাধিক কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।
অবস্থান কর্মসূচি শেষে দুপুর ২টার দিকে বিআরডিবি মহাপরিচালক (গ্রেড-১) মুহম্মদ মউদুদ উর রশীদ সফদারকে সিবিএর পক্ষ থেকে সাত দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এ সময় তিনি দাবিগুলোর সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, ‘বিআরডিবির প্রতিটি সদস্য এর পক্ষে আছে। বিষয়গুলো নিয়ে ইতিমধ্যে আলোচনা হয়েছে। নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব মহোদয়ের সামনেও বিষয়টি তুলে ধরেছি।’
তাদের দাবির বিষয় কথা হয় পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় মাঠ সংগঠক হিসেবে কাজ করেন হুমায়ুন কবীর। নিজের দুরবস্থার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘কোনো মাসে কিস্তির টাকা ওঠাতে পারলে সেখান থেকে কিছু টাকা বেতন পাই, না ওঠাতে পারলে নাই। আমার এক ছেলে নীলফামারী সরকারি বিদ্যালয়ে পড়ে, মেয়ে পড়ে সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে। ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়ার খরচটাও দিতে পারি না। একজন বাবার কাছে এর চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে?’
লালমনিরহাটের পাটগ্রামের মাঠ সংগঠক রোকেয়া বেগম বলেন, এমন বিপদে পড়ছি যে এই প্রশ্নের উত্তর কাউকেই দিতে পারি না। কিভাবে সংসার চলতেছে সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। বোনাসের কথা বাদ দিলাম, মূল বেতনটাও ঠিকমতো পাচ্ছি না। সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারি না। সরকার একটু সুনজর দিলে আমরা বাঁচতে পারি।
পাটগ্রামের সমন্বিত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচিতে (সদাবিক) কর্মরত লতিফা বেগম বলেন, চার-পাঁচ বছর থেকে বেতন পাই না। আমার খুব কষ্ট, বাসাভাড়া, যাতায়াতভাড়ার টাকাটা পর্যন্ত দিতে পারি না। এভাবে চলতে খুব সমস্যা হচ্ছে। পাশে দাঁড়িয়ে চোখের পানি মোছেন মাঠ সংগঠক ইয়াসিন আলী।
শেরপুরের নকলা উপজেলায় অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গত ৯ মাস ধরে বেতন পাই না। অনেকে আরো বেশিদিন ধরে বেতনশূন্য।
ময়মনসিংহের গৌরীপুর থেকে আসা সোমা রানী রায় বলেন, ‘সবাই বলে সরকারি চাকরি করি। কিন্তু আমাদের ভেতরের অবস্থা আমরাই জানি। কষ্টে বুক ফেটে যায়। তাই বৃষ্টিতে ভিজেও এখান থেকে সরে যাইনি।’
প্রসঙ্গত, বিআরডিবির বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি বেতন স্কেলে কর্মী নিয়োগ দেয় বিআরডিবি। কিন্তু প্রকল্প শেষে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে।