অধ্যক্ষ সিরাজের নির্দেশনায় তার সহযোগী নূর উদ্দিনের নেতৃত্বে নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান তিনি। এ সময় নুসরাত হত্যার তদন্ত নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
পিবিআই উপ-মহাপরিদর্শক বলেন, ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে আগুন দেওয়ার আগের দিন ৫ এপ্রিল কারাগারে থাকা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে দেখা করেন তার ঘনিষ্ঠজন নুর উদ্দিনসহ পাঁচজন। সিরাজের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মাদ্রাসার কাছে থাকা হোস্টেলের পশ্চিম অংশে তারা নুসরাতে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেন।
তিনি বলেন, অধ্যক্ষকে আটক করায় আলেম সমাজকে হেয় করা হয়েছে বলে মনে করেন সিরাজ উদ দৌলার সহযোগীরা। এই হেয় করা ও প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখানের ক্ষোভ থেকে নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
বনজ কুমার বলেন, নূর উদ্দিনের পরিকল্পনায় পরদিন ৬ এপ্রিল পরীক্ষাকেন্দ্রে তার বান্ধবী নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে জানিয়ে নুসরাতকে ডেকে ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় দুজন ছাত্র ও দুজন ছাত্রী বোরকা পরে সাইক্লোন সেন্টারের টয়লেটে লুকিয়ে ছিলেন। তারাই নুসরাতের শরীরে আগুন লাগিয়েছেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অংশ নেয় মোট ১৩ জন। এর মধ্যে দুই তরুণীরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, গত ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে নুসরাতকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরা ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাতকে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এর আগে ৭ এপ্রিল নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেওয়া বক্তব্য) দেন।
নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।
নুসরাতের স্বজনরা জানান, গত ২৭ মার্চ তার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার।
তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
নুসরাতের গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মামলা করেছেন। এতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। অন্য আসামিদের মধ্যে শামীম, জাবেদ ও নূর উদ্দিন ওই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। এরই মধ্যে নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।