বরাবরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্স খুলতেই মিলল নগদ ১ কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার ২০০ টাকা। এছাড়াও রয়েছে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও রুপার অলংকার বিদেশি মুদ্রাও। প্রতি তিন মাস পরপর খোলা হয় পাগলা মসজিদের দানবাক্স হিসেবে ব্যবহৃত পাঁচটি লোহার সিন্দুক।
শনিবার (১৩ এপ্রিল) দানবাক্স খুললে সকাল থেকে চলে টাকা গণনা। আর বরাবরই এসব দানবাক্স খুললে বিপুল পরিমাণ অর্থ, স্বর্ণ ও রুপার অলংকার মেলে।
এর আগে ১৯ জানুয়ারি দানবাক্স খুলে পাওয়া যায় নগদ ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৭৩ টাকা এবং বিদেশি মুদ্রাসহ স্বর্ণ ও রুপার অলংকার।
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসন বলছে, দানবাক্স থেকে পাওয়া এসব বিপুল অর্থ এ মসজিদসহ জেলার সব মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়।
মসজিদের খতিব বলছেন, এখানে মানত করলে মনের বাসনা পূর্ণ হয়- এমন ধারণা থেকে ধর্মবর্ণ-নির্বিশেষে এখানে দান করে থাকেন।
জনশ্রুতি আছে, একসময় এক আধ্যাত্মিক পাগল সাধকের বাস ছিল কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া ও রাখুয়াইল এলাকার মাঝপথে প্রবাহিত নরসুন্দা নদের মধ্যবর্তী স্থানে জেগে ওঠা উঁচু টিলাকৃতির স্থানটিতে।
মুসলিম ও হিন্দু-নির্বিশেষে সব লোকজনের যাতায়াত ছিল ওই কামেল পাগল সাধকের আস্তানায়।
ওই পাগল সাধকের দেহাবসানের পর তার উপাসনালয়টিকে কামেল পাগল পীরের মসজিদ হিসেবে ব্যবহার শুরু করে এলাকাবাসী। কিন্তু ওই কামেল পাগল পীরের দেহাবসানের পর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে এলাকা এমনকি দেশের দূর-দূরান্তের লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে।
ওই পাগল পীরের মসজিদে মানত কিংবা দানখয়রাত করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে বিভিন্ন বয়সের হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষ মানত নিয়ে আসেন এই মসজিদে। তারা নগদ টাকা-পয়সা,স্বর্ণ ও রুপার অলংকারের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দান করেন।
বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার এ মসজিদে মানত নিয়ে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নামে। আগতদের মধ্যে মুসলিমদের অধিকাংশই জুমার নামাজ আদায় করেন এ মসজিদে। আর এ ইতিহাস প্রায় আড়াইশ বছরেরও অধিক সময়ের বলে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসককে (ডিসি) সভাপতি করে প্রশাসন ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনকে নিয়ে গঠিত কমিটি এ মসজিদটির ব্যবস্থাপনা ও দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। আর দানের বিপুল অর্থ মসজিদ ও মসজিদ ক্যাম্পাসে অবস্থিত মাদ্রাসা, এতিমখানাসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হয়।
এ ব্যাপারে কথা হলে কিশোরগঞ্জ রূপালী ব্যাংকের কর্পোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলাম ১ কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার ২০০ টাকা এবং স্বর্ণ ও রুপার অলংকারসহ বিদেশি মুদ্রা ওই ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা নিশ্চিত করেন।
এই বিষয় কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যজিস্ট্রেট মোহম্মদ হাবিবুর রহমান জানান, তিনি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শরীফুল ইসলাম, আকলিমা বেগম, সাগুফতা হক এবং রূপালী ব্যাংক কিশোরগঞ্জ কর্পোরেট শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. আমিনুল ইসলামের উপস্থিতিতে দানবাক্সগুলো খোলার পর সকাল থেকে প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ব্যাংক, মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা টাকা গোনার কাজে অংশ নেয়।