Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ২৯ মঙ্গলবার, এপ্রিল ২০২৫ | ১৬ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

জীবন সংগ্রামী ৫ জয়িতার গল্প

এসএম বাচ্চু, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪৭ PM
আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৫৪ PM

bdmorning Image Preview


'জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ শীর্ষক' কার্যক্রমের আওতায় সাতক্ষীরায় তালা উপজেলায় ২০১৮ সালের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫ জয়িতার জীবন সংগ্রাম সাফল্য অর্জন করছেন।

সফল জননী নারী রওশনারা খাতুন:

রওশনারা খাতুন (৪৭)। তালা উপজেলার পাঁচপাড়া গ্রামের সোবহান শেখের স্ত্রী। তিনি ৩ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তানের মাতা। নিজে মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে রওশনারা। অভাবের সংসারের যেখানে নিজেদের খাওয়া জোটেনা সেখানে সন্তানদেরকে তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।

স্বামীর সাথে কৃষি কাজ করার পাশাপাশি সংসারের সকল ধকল সামাল দেন তিনি। নিজেদের কোন জমি নেই তবে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাত্র ৬ কাঠা জমি রয়েছে যাত্রে বার্ষিক আয় আসে মাত্র ১০ হাজার টাকা। তারপরও অদম্য মনোবল ও প্রবল ইচ্ছা শক্তি নিয়ে ছেলে-মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তিনি। নিরন্তন চেষ্টায় সন্তানদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরে দারুণ খুশি রওশনারা খাতুন।

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী মমতাজ বেগম:

তালা উপজেলার ভায়ড়া গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম বিশ্বাসের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৪৫)। দুই সন্তানের জননী মমতাজ খাতুনের বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে এসে দু'বেলা খেতে পারতো না, থাকার মতো ঘরও ছিল না। স্বামীর সংসারে থেকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে এবং কাঁথা সেলাই করে কিছু টাকা জমিয়ে গরু কিনে পালন করা শুরু করে মমতাজ।

এ ছাড়া শাড়ি কাপড় বিক্রি করেও কিছু টাকা জমান তিনি। এভাবে নিজের পরিশ্রম ও সততার গুণে বর্তমানে সংসারে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি কয়েকটি গরু পালনের পাশাপাশি জমিও ক্রয় করেছে। বর্তমানে স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে আছেন মমতাজ।

নিজেকে গর্বিত বলে মনে করে মমতাজ খাতুন বলেন, 'আমি নিজের প্রচেষ্টায় একজন নারী হিসাবে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করেছি। যে কারণে সরকার আমাকে জয়িতার পুরস্কার দিয়েছে। এ সফলতার জন্য আমি সকলের কাছে কৃতজ্ঞ।'

শিক্ষা ক্ষেত্রে সাফল্য অজর্নকারী নারী সালমা খাতুন:

তালা উপজেলার আটারই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সালমা খাতুন (২৪)। তার পিতার নাম মোহাম্মদ আলী (মৃত) এবং মাতা মনোয়ারা বেগম। বেশ ক'বছর পূর্বে পিতা মারা যাবার পর সংসারে নেমে আসে অভাব অনাটন। বড় ভাইয়ের সংসারে থেকে বিভিন্ন জায়গায় টিউশুনি করে সে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে। তালা মহিলা ডিগ্রী কলেজ হতে ডিগ্রী শেষ করে এ বছর এমএ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। বর্তমানে তার ইচ্ছা এমএ পাস করে একটা ভাল চাকরি পাওয়া। এ জন্য সে সকলের সহযোগিতা ও আর্শিবাদ কামনা করেছেন।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে সাফল্য অর্জনকারী নারী স্বর্ণলতা দাশ:

নির্যাতিত অসহায় নারী স্বর্ণলতা দাশ (৩২)। তিনি তালা উপজেলার খানপুর গ্রামের তারাপদ দাস ও অঞ্জলী দাসের কন্যা। অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে লেখাপড়ার সুযোগ পাননি তিনি। এক পর্যায়ে স্বামী তালাক দিলে একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে বাবার অভাব-অনটনের সংসারে এসে ওঠেন তিনি। বাবারও কোন জায়গা-জমি না থাকায় বিভিন্ন দুয়ারে ভিক্ষাবৃত্তি করতো। কিন্তু এতেও দু’বেলা খাবার জুটতনা তাদের। তখন বাইরে দিন মজুরের কাজ করা শুরু করলো স্বর্ণলতা।

তার আয়ের টাকায় বাবার ভিক্ষবৃত্তি বন্ধ করার পাশাপাশি মা-বাবা ও সন্তানের মুখে দু’মঠো ভাত জুটতে শুরু করলো। এক পর্যায়ে ব্র্যাকের সামাজিক ক্ষমতায়ন কর্মসূচির আওতায় গণনাটকে কাজ করা শুরু করলো স্বর্ণলতা দাশ। বর্তমান তার আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। কয়েকটি গরু কিনে তা প্রতিপালনে করতে শুরু করে।

বর্তমানে সংসারে আর অভাব নেই তাদের। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নারী স্বর্ণলতা দাশ নতুন উদ্যমে কাজ করছে। তিনি একমাত্র ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে চান। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সমাজে একজন সফল জয়ীতা নারী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান।

সমাজ উন্নয়নে অসমান্য অবদান রেখেছেন গুলশান আরা খাতুন:

সমাজ উন্নয়নে অসমান্য অবদান রাখা নারী গুলশান আরা খাতুন (৪৪)। তিনি উপজেলার শিশরাশুনী গ্রামের শেখ জালাল উদ্দীনের স্ত্রী। সমাজকর্মী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা গুলশান আরা খাতুন দুইপুত্র সন্তানের জননী। প্রতিদিন সংসার সামালিয়ে বের হন সমাজ উন্নয়নে। দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষের সেবায় তার পেশা। নারীর প্রতি সহিংসতা, বাল্য বিবাহ রোধ, মাদকের বিরুদ্ধে প্রচারণা, স্যানিটেশন, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, উঠান বৈঠকসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকেন তিনি। এ ছাড়া নির্যাতিত, দুঃস্থ, স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা নারীর ক্ষমতায়নের জন্য তিনি দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্র করে যাচ্ছেন।

বর্তমানে তিনি নারী উন্নয়ন সংস্থার সম্পাদিকা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারী উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে বিনামূল্যে দর্জি বিজ্ঞান প্রশিক্ষণ, সেলাই মেশিন বিতরণ, গরু-ছাগল বিতরণ করে নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

এ ছাড়া জলাবদ্ধতার ঝুঁকি হ্রাস ও এলাকা থেকে জলাবদ্ধতা নিরসন করতেও তিনি নিরলস ভূমিকা পালন করে থাকেন। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি সমাজে নিজেকে একজন সফল জয়ীতা নারী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন।

Bootstrap Image Preview