দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়া সিলেট-২ আসনের এমপি মোকাব্বির খান গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিলে অংশ নিয়েছেন। তার কাউন্সিলে অংশগ্রহণ নেওয়ায় দল ছাড়ার কথা বলেছেন গণফোরামের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক।
শুক্রবার সকালে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে শুরু হয় দলটির বিশেষ কাউন্সিল। ওই কাউন্সিলে অংশ নেন মোকাব্বির খান।
মোকাব্বিরকে মঞ্চে বসার অনুমতি দেয়ায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলটির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক। তিনি বলেছেন, ‘মোকাব্বির খান ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে গেলে বলে গেট আউট (বেরিয়ে যাও) আমার দরজা তোমার জন্য চিরতরে বন্ধ, আর বাসায় গেলে বলে সংসদে যাও। এ ধরনের দ্বৈতনীতির দলে আমি নেই। ড. কামালের এই আচরণে আমি ব্যথিত। এই দল আর আমি করব না।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন মোকাব্বির। তিনি গণফোরামের দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত প্রথম এবং একমাত্র সংসদ সদস্য।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মাত্র ছয়টি আসনে জয় পায় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপি। আর গণফোরামের দুটি মিলিয়ে জোটের আসন হয় আটটি।
নির্বাচনে ভোট ডাকাতির অভিযোগ তুলে জোটের পক্ষ থেকে সংসদে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হলেও গণফোরাম থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির ও সুলতান মো. মনসুর আহমেদ শপথ নিয়ে সংসদে যান। এরপর গণফোরাম সুলতার মনসুরকে বহিষ্কার করা হলেও মোকাব্বির রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তিনি বর্তমানে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে আছেন।
শপথ নেয়ার পর মোকাব্বির দাবি করেন, তিনি দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের অনুমতি নিয়েই শপথ নিয়েছেন। কিন্তু পরে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন তাকে নিজের কার্যালয় থেকে বের করে দেন।
শুক্রবার বিশেষ কাউন্সিলের সভা শুরু হওয়ার পর দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন কামাল হোসেন। মঞ্চে কামাল হোসেনের তিন চেয়ার দূরে বসেন মোকাব্বির।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারী মোকাব্বির খানের কাউন্সিলে উপিস্থিতি ও মঞ্চে বসা নিয়ে দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
গ্যালারিতে বসা কাউন্সিলরদের অনেকে মোকাব্বিরকে উদ্দেশ্য করে ক্ষোভ ঝাড়েন। তার প্রতি অশালীন ভাষা প্রয়োগ করতেও দেখা গেছে অনেককে।
নেতাকর্মীরা মোকাব্বির খানের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তুই ওখানে বসে আছিস কেন? তোর তো ওখানে বসার জায়গা না।’
এ সময় মোকাব্বিরকে মঞ্চে বসার সুযোগ দেয়ায় দলের সভাপতি ড. কামালের ওপরও ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলটির অনেকে।
কাউন্সিলে মোকাব্বিরের উপস্থিতি নিয়ে নেতাকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উল্লেখ করে গণফোরামের প্রশিক্ষণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, মোকাব্বির খানকে নিয়ে কামাল হোসেনের নানামুখী আচরণ রাজনীতির জন্য খুব কষ্টদায়ক।
প্রথম অধিবেশনের পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, মোকাব্বির খান যখন শপথ নিতে যান, তখন দলে দুই ধরনের মত ছিল। পরে বলা হয়েছে কার্যনির্বাহী সভায় যে সিদ্ধান্ত হবে, তাই সবাই মেনে নেবে। ২০ তারিখের কার্যনির্বাহী সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে মোকাব্বির খানকে শোকজ করা হবে। আজকে ২৬ তারিখ, এখনও শোকজ করা হয়নি। আর আজকে কাউন্সিল অধিবেশনের চিত্র তো দেখেছেনই। আমি এসবের মধ্যে নেই। আমি এই দল করব না।