কারাবন্দী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া নিয়ে এখনই মন্তব্যের কিছু নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্যারোলের জন্য সাধারণত আবেদন করতে হয়। এখন পর্যন্ত কেউ আবেদন করেনি। যেহেতু এ বিষয়ে আবেদনই করা হয়নি, তাই আমাদের মন্তব্য করার কিছু নেই।
শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপির নির্বাচিতদের সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির বিজয়ীদের শপথের বিষয়ে সরকারের কোনো চাপ নেই। ওই এলাকার ভোটারদের চাপে তারা শপথ নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কায় ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সিরিজ বোমা হামলায় নিহতদের স্মরণ করছি। এ হামলায় আমার ফুফাতো ভাই শেখ সেলিমের মেয়ের ছেলে আমার নাতি ৮ বছরের নিষ্পাপ শিশু জায়ান চৌধুরী নিহত হয়েছে। জায়ানের বাবা মশিউর হক চৌধুরী এখন পর্যন্ত গুরুতর আহত অবস্থায় শ্রীলঙ্কার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
তিনি বলেন, আমি ব্রুনাইয়ের রাজধানীতে পৌঁছানোর পর এই মর্মান্তিক হামলার খবর শুনতে পাই। আমাদের প্লেনটা যখন আকাশে উড়ছিল তখন খবর আসলো এ ধরনের হামলা হয়েছে। পরবর্তীতে ওখানে নেমে বিস্তারিত খবরটা পাই। জায়ানের মৃত্যুর খবর পাই। এ খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীকে একটি শোক বার্তা পাঠাই। আমি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকলকে কার্যকর এবং ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।
জঙ্গি হামলার আশঙ্কা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে সজাগ আছি। গোয়েন্দারা চমৎকার কাজ করছে। গতকালও আমি আমাদের গোয়েন্দা প্রধানদের সঙ্গে কথা বলেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জনমত গড়ে তুলতে হবে। সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা একাজে জড়াচ্ছে। আমার প্রশ্ন- তারা এই আত্মঘাতী হামলা করে কী পাচ্ছে।
তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ডে কী হলো? একজন মাথায় ক্যামেরা লাগিয়ে গুলি করার মুহূর্ত সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কী বীভৎস! কী বীভৎস মানসিকতা! সে একজন খ্রিস্টান। আর এখানে (শ্রীলঙ্কায়) যারা শনাক্ত হয়েছে, তারা মুসলমান।
ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান রোহিঙ্গা সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রসংশা করেন ব্রুনাইয়ের সুলতান। রোহিঙ্গা সমস্যার ন্যায়সঙ্গত সমাধানে গুরুত্বারোপ করেন তিনি। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আশিয়ান, আঞ্চলিক ও বিশ্ব নেতাদের সহযোগিতা কামনা করি।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তিও হয়েছে। যে মুহূর্তে রোহিঙ্গা যাওয়ার কথা সেই মুহূর্তে তারা প্রতিবাদ শুরু করল যে তারা যাবে না। রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে চীন, ভারত ও জাপান তাদের জন্য ঘরবাড়ি করে দিতেও তারা রাজি। প্রত্যেক দেশেই কিন্তু তাদের কিছু কিছু রিফিউজি আছে। এদের সঙ্গে আমি আলোচনা করেছি।’
তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক তিনটি সংস্থাকে বলেছি আপনারা রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করতে চাইলে মিয়ানমারের মাটিতে করেন। এখানে মিয়ানমারের সরকারেরও একটা প্রচণ্ড অনীহা দেখা দিচ্ছে। এ ধরনের সমস্যা কিন্তু কিছু লোক রিফিউজিদের লালন-পালন করার জন্য যতটা আগ্রহ দেখায় ফেরত পাঠানোর জন্য কিন্তু ততটা আগ্রহ দেখায় না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি স্পষ্ট ওই তিন সংস্থার প্রতিনিধিদের বলে দিয়েছি, সামনে আমাদের বর্ষাকাল যদি দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে এদের ক্ষতি হয় তাহলে দায় কে নেবে? ওই সংস্থাগুলোরও তো নেয়ার দরকার? আমি এ কথাটা জাতিসংঘকেও জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘ব্রুনাইয়ের পক্ষে সুলতান আমার প্রস্তাবের পক্ষে সম্মতি জানান এবং একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে দু’দেশের মধ্যে ব্যবসা বাড়াতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে সম্মত হন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘দু’দেশের মধ্যে আর্থিক খাতে উন্নয়ন ও সামরিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য আমরা একমত হই। দু’দেশের জনগণের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগের বিষয়ে আমরা একমত হই। বিগত এক দশক ব্রুনাইয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রুনাইয়ের সুলতান বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।’
প্রসঙ্গত, ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ থেকে ২৩ এপ্রিল ব্রুনাই সফর করেন। সফরে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার ছয়টি সমঝোতা স্মারক সই এবং কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভিসা ছাড়া ভ্রমণের সুযোগ দিতে কূটনৈতিক নোট বিনিময় হয়েছে।
সই হওয়া সমঝোতাগুলো হচ্ছে- কৃষি, মৎস্যসম্পদ, প্রাণিসম্পদ, শিল্প ও সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং এলএনজি ও এলপিজি সরবরাহের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী সফরে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের ফোরামে বক্তব্য দেন। দেশে ফেরার দিন সকালে শেখ হাসিনা ব্রুনাইয়ের রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সেরি ভবনের ভিত্তিস্থাপন এবং রয়েল রেজালিয়া জাদুঘর পরিদর্শন করেন।