Bootstrap Image Preview
ঢাকা, ১১ রবিবার, মে ২০২৫ | ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ | ঢাকা, ২৫ °সে

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বন্ধ নিটার; মুঠোফোনে অভিভাবককে মামলার হুমকি

বিডিমর্নিং ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১ মে ২০১৯, ০৮:১৬ PM
আপডেট: ০১ মে ২০১৯, ০৮:১৯ PM

bdmorning Image Preview


শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে সাভারের জাতীয় বস্ত্র প্রকৌশল ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (নিটার) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের অব্যাহত আন্দোলনের চাপে গত সোমবার পরিচালনা পরিষদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিটার বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি মঙ্গলবার সকাল নয়টার মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা নিবাস না ছেড়ে চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। শিক্ষার্থীদের দাবি আন্দোলন দমাতে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুঠোফোন মাধ্যমে মামলার হুমকি দিচ্ছেন। নিবাস বন্ধের দুদিন পরেও শিক্ষার্থীরা পিছু না হটে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আগামীকালের কঠোর আন্দোলনের জন্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘মূলত আমাদের ভয় দেখানোর জন্যেই ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আমাদের জোট ভেঙ্গে দেয়ার উদ্দেশ্যেই ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। বাসায় বাসায় ফোন করে আমাদের পরিবারকে মামলার হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে। কিন্তু কোনো হুমকি-ধমকিই আমাদের চলমান আন্দোলনকে দমাতে পারবেনা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ঘরে ফিরবোনা’।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, নিটার বন্ধ ও নিবাস ছাড়তে বলা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে নিটারের অধক্ষ ড. মোহাম্মদ মীজানুর রহমান বিডিমর্নিংকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় নিটার। তাই কোনো শিক্ষার্থীর ফল বাতিল করে সংশোধিত ফল ঘোষণার ক্ষমতা নিটারের হাতে নেই। বিষয়টি বারবার বোঝানোর পরও শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক দাবিতে আন্দোলনের নামে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে নিটার অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়’।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রিফাত জাহীন বলেন, ‘সোমবার সকালে নিটারের রেজিস্ট্রার কাজী আন্দালিব আমিন আমার বাবার মুঠোফোনে কল করে আমাকে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে তাঁদের কথামতো বাসায় না ফিরলে আমার ও আব্বার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন। একইভাবে অনেক শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের হুমকি দিয়েছেন তিনি।’

কোনো শিক্ষার্থীর শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণ বলা হোক কিংবা এমতাবস্তায় ওই শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা অথবা অভিভাবকদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি কতটা সংগত—এমন প্রশ্নের জবাবে রেজিস্ট্রার কাজী আন্দালিব আমিন বিডিমর্নিংকে বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিটার বন্ধ থাকবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ছাত্র ও ছাত্রী নিবাসও বন্ধ থাকবে। আর সেই পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই শিক্ষার্থী ও তাঁর অভিভাবকদের এসব বলা হয়েছে’।

প্রসঙ্গত,  সপ্তম ও অষ্টম ব্যাচের এক বিষয়ে অকৃতকার্য চার ছাত্রের ফল বাতিল করে সংশোধিত ফল ঘোষণাসহ আরও ছয় দফার দাবিতে গত ১১ এপ্রিল থেকে প্রতিষ্ঠানের চার ব্যাচের ১ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থী টানা ২০ দিন ধরে ক্লাস বর্জন করে চলেছেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নিটার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতে থাকে।

নিটার কর্তৃপক্ষ বলছেন, অযৌক্তিক দাবিতে কতিপয় শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা প্রশাসনিক ভবন ও শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছিলেন।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ তাঁদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছেন। ক্যাম্পাসে পুলিশ পাঠিয়ে ও মুঠোফোনে শিক্ষার্থী এবং তাঁদের অভিভাবকদের নানা ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।

নিটার পক্ষ থেকে জানানো হয়, অব্যাহত আন্দোলনের কারণে গত সোমবার নিটার পরিচালনা পর্ষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে ক্যাম্পাসে কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থী কর্তৃক সংঘটিত শৃঙ্খলাবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার পাশাপাশি সকাল নয়টার মধ্যে ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস খালি করার নির্দেশ দেন।

এ ঘোষণয় গত মঙ্গলবার সকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। তাঁরা ‘ক্যাম্পাস বাঁচাও’ নামে আন্দোলনের ডাক দিয়ে দফায় দফায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করে অনতিবিলম্বে তাঁদের দাবি মেনে নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করার দাবি জানান।

(প্রতিবেদন প্রকাশ করা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত ছিলো এবং আগামীকাল সকাল থেকে কঠোর আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।)

Bootstrap Image Preview